আফগানদের বিরুদ্ধে ১০৫ রানে টাইগারদের জয়
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শুরুতেই বাঘের গর্জন। শুরু থেকেই উইকেট। একের পর এক উইকেট হারাতে হারাতে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তাকে ১৬২ রানেই থামিয়ে দিল বাংলাদেশ। ফলে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই এসে গেল ১০৫ রানের বিশাল জয়। প্রথম ম্যাচেই সেরার পুরস্কার তুলে নেন সাবেক অধিনায়ক, উইকেটরক্ষম ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের করা ২৬৭ রানের জবাবে খেলতে নেমে প্রথম থেকেই চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আফগানিস্তান। ৩ রানেই হারায় ৩ উইকেট। এরপর ছোট ছোট দু’একটি জুটি গড়ে আফগানরা চেষ্টা করেছে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নিতে। শেষ পর্যন্ত পারেনি মোহাম্মদ নবিরা। থেমে যেতে হয়েছে ৪২.৫ ওভারে ১৬২ রানেই। একই সঙ্গে গত বছর এশিয়া কাপে হারের বদলাটাও নিয়ে নিল বাংলাদেশ।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তুলে নেন ২০ রানে ৩ উইকেট। সাকিব আল হাসান ৪৩ রানে তোলেন ২ উইকেট। রবেল, মাহমুদুল্লাহ এবং তাসকিন নেন ১টি করে উইকেট।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই পরপর তিন উইকেট হারায় আফগানরা। মাশরাফির আক্রমণের শিকার হলেন জাভেদ আহমাদি এবং আসগার স্টানিকজাই। রুবেলের শিকার হলেন আফসার জাজাই।
প্রথম ওভারের শেষ বলেই আফগান ওপেনার জাভেদ আহমাদির উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাশরাফির শট লেন্থের বলটি অন সাইডে খেলতে গিয়েছিলেন জাভেদ। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় বোলারস ব্যাকড্রাইভ। ক্যাচটি তালুবন্ধী করতে মোটেও কষ্ট করতে হয়নি মাশরাফির।
নিজের প্রথম ওভারে এবং দলীয় দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই আফগানদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন। রুবেলের শট লেন্থের বলটি অফস্ট্যাম্প বরাবর আসছিল। রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে পায়ে লাগান আফসার জাজাই। আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস আঙ্গুল তুলে দেন এলবিডব্লিউ আউটের। দুই ব্যাটসম্যান আলাপ করে রিভিউ চান। কিন্তু রিভিউর ফল গেলো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই। ফলে দুর্দান্ত সূচনা ঘটলো বাংলাদেশের।
তৃতীয় ওভারের শেষ বলে আবারও উইকেট। এবারও বোলার অধিনায়ক মাশরাফি। ব্যাটসম্যান আসগার স্টানিকজাই অনেকটা নার্ভাস। ওয়াইড লেন্থের বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কোনায় লাগান। ক্যাচ উথে যায় স্লিপে দাঁড়ানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে। রিয়াদ ক্যাচটি তালুবন্দী করতেই বাংলাদেশের জন্য আরেকটি ব্রেক থ্রু। ৩ রানে আফগানদের গেল তিন উইকেট।
তবে চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়ে নওরোজ মোগল আর সামিউল্লাহ সেনওয়ারি চেষ্টা করেন আফগানদের টেনে তুলতে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে রুবেলের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন নওরোজ। ২৭ রান করে ফিরে গেলেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটাতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না মাশরাফিদের। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকে রানআউট করে ফিরিয়ে দিলেন সাব্বির রহমান আর মুশফিক। ৭৫ বলে ৪২ রান করা সামিউল্লাহ ২৬তম ওভারের চতুর্থ বল থেকে দ্রুত দ্বিতীয় রান নিতে যান। সাব্বির রহমানের সরাসরি থ্রো ধরেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন মুশফিক। ৭৮ রানে গেলো পঞ্চম উইকেট।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৫৮ রান তুলে বাংলাদেশকে মোটামুটি বিপদেই ফেলে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ নবি ও নজিবুল্লাহ জাদরান। তবে, এ মুহুর্তে ত্রাতার ভুমিকায় আসলেন সাকিব আল হাসান। তার ঘুর্ণি ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ আউট হলেন নজিবুল্লাক।
এর একটু পরই আউট হলেন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক মোহাম্মদ নবিও। ৪৩ বলে ৪৪ রান করা নবি মাশরাফির বলে ক্যাচ দিলেন সৌম্য সরকারের হাতে।
এরপর মিরওয়াইজ আশরাফ আর আফতাব আলম গড়েন ১৮ রানের জুটি। কিন্তু ১৫৪ রানেই আফগানরা হারিয়ে বসে অষ্টম উইকেট।
সাকিব আল হাসানের বলে মিরওয়াইজ আশরাফের কাচটি তালুবন্ধী করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পুরো ম্যাচে চেষ্টা করেও উইকেট পাচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে শেষ দিকে এসে একটি উইকেট দখল করেন তিনি। তার বলে ওঠা হামিদ হাসানের ক্যাচটি তালুবন্দী করেন এনামুল হক। শেষ উইকেট হিসেবে ১৪ রান করা আফতাব আলমকে রান আউট করে বিজয় উল্লাসে মাতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
বিজয়ের পর গ্যালারিতে উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের সমর্থকরা। সে সঙ্গে পুরো বাংলাদেশও। গ্যালারিতেই ল্যাপ অব অনার দিলেন মাশরাফির দল। যেন তারা বিশ্বকাপই জিতে গেলেন। মূলতঃ আফগানদের বিপক্ষে যে চাপে ছিল বাংলাদেশ, এই ল্যাপ অব অনার হচ্ছে তার থেকেই মুক্তির উৎসব।