সোবহানের ফাঁসির আদেশ : বাবা নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে
রায়ে আইনগত ও তথ্যগত ভুল রয়েছে : আইনজীবি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহানকে হত্যা ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ রায় দেন।
সোবহানের বিরুদ্ধে ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭ এই ৬টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকি ৫, ৮ ও ৯ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওইসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রের ৯টি অভিযোগ ছিল সেবাহানের বিরুদ্ধে।
যেসব অভিযোগে ফাঁসি
অভিযোগ-১
১৯৭১ সালে মুহাম্মদ আবদুস সুবহান তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও বিহারীদের নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়া স্বাধীনতাকামী লোকদের অপহরণের পর হত্যা করেন।
অভিযোগ-৪
১৯৭১ সালে ২ মে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মিরা ঈশ্বরদী সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অসংখ্য বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন লোককে হত্যা করে।
অভিযোগ-৬
১৯৭১ সালে ১২ মে মওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মির একটি বিরাট বহর সুজানগর থানাধীন সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৩-৪শ লোককে গণহত্যা করে। বিভিন্ন লোকজনের বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
যেসব অভিযোগে যাবজ্জীবন
অভিযোগ-২
১৯৭১ সালে ১৩ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে ঈশ্বরদী যুক্তিতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে লুটপাটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে ৫ জন নিরীহ-নিরস্ত্র লোককে হত্যা ও ৩ জনকে গুরুতর আহত করা হয়।
অভিযোগ-৭
১৯৭১ সালের ২০ মে মওলানা সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মিরা পাবনা সদর থানার ভাড়ারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন নিরীহ লোককে অপহরণ করে। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রামের একটি স্কুলে হত্যা করে। অপর ১৭ জনকে পাবনা সদর নূরপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়ে আটক করে নির্যাতন করে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আটঘরিয়া থানার দেবত্তোর বাজারের পাশে বাঁশবাগানে গুলি করে হত্যা করে। বাকিদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ফাঁসির আদেশের রায়ে সন্তুষ্ট নয় তার পরিবার। বুধবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় আবদুস সোবহানের চতুর্থ ছেলে নেসার আহমেদ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আজ যে রায় দিয়েছে আমরা তার বিরুদ্ধে আপিল করবো। আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। ট্রাইব্যুনালে আমার বাবার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যে সকল সাক্ষী আনা হয়েছিলো তার সবটাই সাজানো।’
আপনার বাবার পক্ষে সাফাই সাক্ষি দেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ আমাদের আইনজীবীরা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। এ কারণেই আমরা কোন সাফাই সাক্ষি দেইনি। এ রায়ে আমারা মোটেও সন্তুষ্ট নই। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপলি করবো।’
মামলার রায়ে আইনগত ও তথ্যগত ভুল রয়েছে বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। বুধবার রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল আবদুস সোবহানের যে রায় দিয়েছে তা যথার্থ নয়। আমরা মনে করি, এই রায়ে আইনগত ও তথ্যগত ভুল রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো, আপিল করার সুযোগ আমাদের রয়েছে। আইনগত ও তথ্যগত যে সকল ভুল রয়েছে তা আমরা তুলে ধরবো। আশা করি উচ্চ আদালত এই ভুলগুলো শুধরে দেবেন।’
উল্লেখ, বুধবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহানকে হত্যা ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।