আদালতের আদেশ সবার জন্যই -সুরঞ্জিত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হাই কোর্ট সরকারকে যে নির্দেশ দিয়েছে তা সবার জন্যই পালনীয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলছেন, কোর্ট নির্দেশনা যার প্রতি দিয়ে থাকুক না কেন, তা সবার জন্য পালনীয়। গতকাল রোববার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সুরঞ্জিত বলেন, কোর্টের ক্ষমতা আছে রুল দেওয়ার। বিষয়টি নিয়ে আরও একটি মামলা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মুম্বাইয়ের হাই কোর্টও এ বিষয়ে রায় দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে হরতাল বা এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যদি জানমালের ক্ষতি হয় তবে যে কর্মসূচি দিয়েছে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে ফেব্র“য়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই হরতাল চলছে।
নাশকতা ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে। রোববার এ বিষয়ে একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ‘হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য রোধে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।
নৃশংস অবরোধ কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট। চলমান অবরোধে দেশের অর্থনীতির ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে আইন করে এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি নিষিদ্ধ হলে সাংবিধানিক অধিকার হরণ হবে কি না- এমন প্রশ্নে সুরঞ্জিত বলেন, আমাদের সংবিধানে চলাফেরার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার এই অধিকার অন্য কারও চলাফেরায় বাধা দিয়ে নয়। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করতে পারবেন না।
আদালতের মাধ্যমে এ ধরনের নির্দেশনা আসায় রাজনীতিবিদদের (সরকার) সামনে কোনো সীমাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের ব্যাখ্য দেওয়ার অধিকার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের। এই অধিকার নিরঙ্কুশ। এমনকি সংসদ যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন করে, সুপ্রিম কোর্ট সেখানেও হস্তক্ষেপ করতে পারে।
হরতাল-অবরোধ বন্ধে হাইকোর্টের জারিকৃত রুল সরকার ও অন্যান্য পক্ষের পালন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন আইন বিচার ও সংসদ বিয়ষক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
এ সময় তিনি পাশ্ববর্তী অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, পশ্চিমা অনেক দেশেই এসব আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতির জন্য মামলা হয়েছে। সেসব দেশের মামলার রায়ও হয়েছে।তিনি বলেন, হরতাল অবরোধ করা যেমন রাজনৈতিক অধিকার, পাশাপাশি নিজের অধিকার পালন করতে গিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব করা যাবে না। হরতাল-অবরোধ যারাই ডাক দেবে যদি সেই কর্মসূচিতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাহলে সেই ক্ষতিপূরণ তাদেরই দিতে হবে।
এদিকে দেশে প্রথমবারের মতো পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বিল-২০১৫ আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে সরকারি- বেসরকারি অংশদারিত্বে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বে উন্নয়ন কাঠামোতে আইনি কাঠামো না থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয় না। তাই আইনি কাঠামো করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ এসেছে। ইতোমধ্যে পিপিপি বিল-২০১৫ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। বিলটি যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সাব কমিটি গঠর করা হয়েছে। এটি পাস করা হলে সরকারি- বেসরকারি অংশিদারিত্ব উন্নয়ন কাঠামো আরো গতি পাবে এবং নতুন মাত্রা যোগ হবে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র টওতিমন্ত্রী ও কমিটির সদস্য শামসুল হক টুকু। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।