মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের ৪র্থ সম্মেলন অনুষ্টিত
সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, সম্পাদক মীর মোঃ জসিমউডিদ্দন
বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যূনতম মূল মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা, হোটেল সেক্টরে শ্রম আইন কার্যকর ও শ্রীমঙ্গলে শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর ৪র্থ সম্মেলন ৩০ জানুয়ারি’১৫ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের ২য় পর্বে বিকাল ৩ টার সময় মৌলভীবাজার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হতে এক বিশাল র্যালী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় শহীদ মিনার চত্ত্বরে এসে শ্রমিক সমাবেশ করে। হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট(এনডিএফ), সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জয়দীপ দাস চম্পু, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং- চট্টঃ ১৯৩৩ এর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি শ্রমিকনেতা রফিকুল ইসলাম বলেন চাল, ডাল, তেল, লবনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের উর্ধ্বগতির এসময়ে দেশের অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের মতো আমরা হোটেল শ্রমিকরাও নিদারুন দুঃখ-কষ্ঠের সাথে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমানে আমরা যে মজুরি পাই তা দিয়ে মাসের ১০ দিনও পরিবার-পরিজনও নিয়ে দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাল জুটানো দায় হয়ে পড়ে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার হোটেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নি¤œতম মজুরির গেজেট প্রকাশ করছিল, যা তখনকার সময়েই দ্রব্যমূল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল না। ২০১২ সালে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি কার্যকর ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিখিত চুক্তি করলেও মালিকপক্ষ অদ্যাবধি তা কার্যকর করেননি। এমনকি মালিকরা দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের কোন তোয়াক্কা করেন না। দেশে প্রচলিত শ্রম আইনে যেটুকু সুযোগ-সুবিধা আছে তা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রধান অতিথি আরও বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পেয়ে মন্দা-মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে তারা শোষণ-লুন্ঠন তীব্রতর করে চলেছে। বাজার প্রভাববলয় নিয়ন্ত্রণ ও বৃদ্ধি নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে রক্ত ঝরছে ফিলিস্তিন, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও ইউক্রেনের জনগণের। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ তথা বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বাড়ছে। অপর দিকে মন্দার প্রভাবে মজুরি কমানো, চাকুরি হারানো, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি তথা অনিশ্চিত জীবন-জীবিকার প্রশ্নে শ্রমিক শ্রেণী ও জনগণ ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আন্দোলন-সংগ্রাম, ধর্মঘট-সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত করছে। পাশাপশি আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতায় নীপিড়িত জাতি ও জনগণের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্ববিপ্লবের সম্ভাবনা বাড়ছে। বৈশ্বিক মন্দা ও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশেও। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পেয়ে এদেশকে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার অপতৎতপরতা চলছে। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে শাসক-শোষকগোষ্ঠীর ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়া নিয়ে কামড়াকামড়ি, খেয়োখেয়ী দ্বন্দ্ব-সংঘাতে রূপ পেয়েছে। ক্ষমতার এ দ্বন্দ্ব শুধু ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং সাম্রাজ্যবাদী প্রভূ পরিবর্তনের দিককে সামনে আনছে। ফলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পেয়ে নৈরাজিক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি গভীরতর হওয়ার বিপদ বাড়ছে। দেশকে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের জন ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে। দেশের সকল সমস্যার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা দালাল পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষকের মৈত্রীর ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করে বিশ্ববিপ্লবের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অগ্রসর হতে হবে। এ পথেই হোটেল শ্রমিকসহ শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তি নিহিত।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার নেতা আফজাল চৌধুরী, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্মা, স’মিল শ্রমিক সংঘ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, রিকশা শ্রমিক সংঘের সভাপতি সোহেল আহমেদ, হোটল শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট জেলা কমিটির সহকারী সম্পাদক রমজান আলী পটু, ছাতক উপজেলা কমিটির সভাপতি আনসার আলী, কুলাউড়া পৌর কমিটির সম্পাদক আশিক খান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক শাহিন মিয়া, স’মিল শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি আরজান আলী।
সম্মেলনের ১ম পর্বে কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মোঃ মোস্তফা কামাল সভাপতি ও মীর মোঃ জসিমউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা। প্রধান অতিথি রফিকুল ইসলাম নবনির্বাচিত কমিটিকে উপস্থিত সবার সাথে পরিচিত করিয়ে দেন এবং শপথবাক্য পাঠ করান।
সমাবেশ থেকে বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মূল মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা, সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরির গেজেট কার্যকর, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং চালু, ৮ ঘন্টা কর্ম দিবস, নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্রসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন, শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত ও যুগ্ম-শ্রম পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন এবং জেলা সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালসহ নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।