নগর ভবনে যখন ১২টা বাজল…
নুরুল হক শিপুঃ নগর ভবনে গতকাল যখন ১২টা বাজল, তখন সবই পরিস্কার হলো। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে আর বসা হবে না কয়েস লোদীর। শুরুটা কিন্তু হয়েছিল সকাল থেকেই। ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে ৮টা। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান ফটকে পুলিশের অবস্থান। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে উত্তেজনার আশঙ্কায় প্রশাসন সকাল থেকেই অবস্থান নেয়। সাড়ে ৯টার দিকে কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল কর্পোরেশনে প্রবেশ করলেন। এরপরই কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। তিনি কর্পোরেশনের দুতলায় ওঠার সময়; নিচ তলায় প্রবেশ করলেন কাউন্সিলর আবজাদ হোসেন আমজাদ। ৯টা ৫০ মিনিটে প্রবেশ করলেন প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী। ঠিক ৫ মিনিট পর তিনি মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করে বসলেন মেয়রের চেয়ারে। এ সময় তার সাথে ছিলেন কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদসহ ৪ জন কাউন্সিলর। অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকরা। সালেহ আহমদ চৌধুরী ও রেজওয়ান আহমদ মিলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানালেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ নিয়ে কোনো ধরণের উত্তেজনা বিরাজ করবেনা। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনিই নিয়ম অনুসারে ভারপ্রাপ্ত মেয়র। কিন্তু সকাল ১১টার পর তাদের কথা সঠিক প্রমানিত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টরা যে উত্তেজনার আশঙ্কা করেছিলেন; শেষ পর্যন্ত সেই উত্তেজনা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে কাউন্সিলরদের।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে অফিস করার উদ্যেশে তার নির্বাচনী ওয়ার্ডের মুরব্বীসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোক নিয়ে হাউজিং এস্টেট থেকে কর্পোরেশনের উদ্যেশে যাত্রা করেন। তিনি সকাল ১১টায় পুরানলেনের সামনে আসলে পুলিশ সদস্যরা তাদের বাদা দেন। এ সময় পুলিশ কয়েস লোদীকে জানায়, তিনি আইন অনুযায়ী আসলে এবং কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটালে পুলিশ সহযোগিতা করবে। ১১ টা ১০ মিনিটে কয়েস লোদী সিটি কর্পোরেশনে প্রবেশ করলেই উত্তেজনা দেখা দেয়। কাউন্সিলররা তখন দুভাগে বিভক্ত। প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীর পক্ষের কাউন্সিলররা তখন দুতলায় আর প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর পক্ষের কাউন্সিলররা নিচ তলায় অবস্থান করছিলেন। কয়েস লোদী দুতলায় উঠে এলাকার মুরব্বীদের নিয়ে প্রবেশ করলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের কক্ষে। কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তখন অফিসে ছিলেননা। মুহুর্তেই দুই বলয়ের কাউন্সিলররা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করলেন। শুরু হল বাকবিতন্ডা। এ সময় পুরো নগরভবনে উত্তেজনা বিরাজ করে। প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীর পক্ষে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর পক্ষে কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান কথা বলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অন্যান্য কাউন্সিলররা পরিস্থিতি শান্ত করেন। তখনও প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী মেয়রের চেয়ারেই বসা ছিলেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে কাউন্সিলররা বসেন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। উত্তেজনার কিছুটা অবসান ঘটে তখন। তবে বৈঠকে কাউন্সিল ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। গতকাল রোববার এমন পরিস্থিতি ছিল সিলেট নগরভবনে।