তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার প্রকাশে নিষেধাজ্ঞায় ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনারের উদ্বেগ
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার প্রকাশে সম্প্রতি হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল (এলভিআই) ইউকে। তারা বলেছেন আদালতে রিট দায়েরর পর শুনানির প্রথম দিনেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তার বক্তব্য প্রচার প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটি যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হলে প্রথমেই কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রথমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। এ ধরণের আদেশ আইনজ্ঞ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। শুক্রবার পুর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বলা হয়, আদালতের এই ধরণের রুলিং নজিরবিহীন এবং উপমহাদেশের (এমনকি বিশ্বের) ইতিহাসে এ রকম কোনো রুলিং এর কথা শোনা যায় না। যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় প্রতিটি নাগরিকের ফ্রিডম অফ স্পীচ এন্ড এক্সপ্রেশন (কথা বলা এবং মত প্রকাশ) এবং ফ্রিডম অফ প্রেস (প্রচার) এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, সেখানে কোর্টের এ ধরণের রুলিং সাধারণ মানুষের সংবিধানিক মৌলিক নাগরিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একজন নাগরিকের ফ্রিডম অব স্পীস কেড়ে নিতে পারে না। কেননা আইসিসিপিআর-এর ঘোষণা মতে, নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। রাজনৈতিক মত প্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আর আইসিসিপিআর-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দায়িত্ব হবে নাগরিক এবং রাজনীতিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
এলভিআই এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিষ্টার শরীফ হায়দার মৃদৃলের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এলভিআই‘র পরিচালক ব্যারিষ্টার ওয়াসিফুর রহমান তালুকদার, এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ খান, আবুল মনসুর শাহজাহান, ব্যারিষ্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, এডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আইনজীবি ফোরামের সদস্য সচিব সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, ব্যারিষ্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিষ্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, ব্যারিষ্টার আলিমুল হক লিটন, সলিসিটর মোঃ একরামুল হক মজুমদার, ব্যারিষ্টার মোঃ মুজিবুর রহমান, তানজিন আল ওহাব, জাবি সাবেক ছাত্রদল সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মোস্তাক আহমেদ, আব্দুল বাছিত রফি, ইয়াসিন আহমেদ,
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং দেশে-বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্য যথেষ্ট তথ্য–রেফারেন্স এবং যুক্তির মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। তিনি যে সমস্ত বই এবং পত্র-পত্রিকার রেফারেন্স দিয়েছেন, তা সবই বহুল প্রচলিত এবং বিখ্যাত। এই সমস্ত লেখার বিরুদ্ধে এই অগণতান্ত্রিক সরকার কোনো তথ্যমূলক জবাব দেয়া বা ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু বিএনপি’র নেতা কর্মীরা যেন তাদের নেতার নির্দেশনা বাংলাদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে না পারে, সে জন্য আওয়ামীলীগ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দলীয় আইনজীবিদের মাধ্যমে কোর্ট-কে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি করে চলেছে। কেবল একটি বক্তব্যের জের ধরে তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ৪৭টি মামলা দিয়েছে। এমনকি সরকার প্রভাব খাটিয়ে কিছু মামলায় আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে এটা হাস্যকর। একজন রাজনৈতিক নেতা, জননেতা তাঁর দলের কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এতে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়ার সুযোগই নাই। এমন হাস্যকর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের মাধ্যমে অবৈধ সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই হাস্যকর বানাতে চাইছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দখলদার সরকার ও আওয়ামী লীগ দেশনায়ক তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হাস্যকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে এম এ সালাম বলেন, বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনে সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বর্বরতা, হত্যা এবং হামলা-মামলার নিন্দা জানাচ্ছি। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৩ জানুয়ারি থেকে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। এমন মানবতা বিরোধী ফ্যাসিবাদী আচরণের লাগাম টেনে ধরতে আমরা বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোনো কোর্ট রুল জারি করে কোনো রাজনীতিকের বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেনি। বাংলাদেশের ক্রিমিনাল কোড-এ এমন কোনো আইন নাই যাতে কোনো বিচারাধীন বাক্তির বক্তব্য প্রকাশ এবং প্রচার নিষিদ্ধ করা যায়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সব রাজনৈতিক মামলাই বিচারাধীন রয়েছে। সরকার বহু চেষ্টা করেও আইনের মধ্যে থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন নি। সেজন্য অনেক ধরণের চক্রান্ত-ষড়যন্ত চলছে। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় আদালতের রায়ে তারেক রহমান সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন এবং বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাই এমন একজন রাজনীতিক এবং জননন্দিত জননেতার বিরুদ্ধে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা সত্যিই দুঃখজনক। ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল আশা করে, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে, জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অন্য সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা হিউমান রাইটস চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান দেখিয়ে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতাদের বাকস্বাধীনতার গুরুত্ব অনুধাবন করে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত নিরপেক্ষভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং আদালতের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে বাড়াবে, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে। নাগরিকদের রাজনৈতিক ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব বিবেচনায় হাইকোর্টকে নিজেদের দেয়া আদেশকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি