দক্ষিণ সুরমার জালালপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে দেড় কিলোমিটার রাস্তার ইট সলিং করলেন গ্রামবাসী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল। ৭১-এর রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়তে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন তিনি। সুবল চন্দ্র পাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তথ্য ও গবেষনা কমান্ডার। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ দক্ষিণ সুরমার সাবেক সভাপতি এবং বৈরাগীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি। একই গ্রামের বাসিন্দা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মুক্তিযোদ্ধা হলদর চন্দ্র পাল, জালালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল, বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক ধীমান ব্রত পাল, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড জালালপুর বাজার শাখার অফিসার নীল কান্ত পাল। এ রকম অসংখ্য গুনীজনের জন্ম দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের সেনগ্রামে। এই গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ শিক্ষিত হিন্দু-মুসলিম মিলে এখানে সম্প্রীতির বন্ধন বেশ দৃঢ়। সবাই মিলে এবার গ্রামটিকে সাজাতে হাত দিয়েছেন। স্বেচ্ছায় প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা ইট সলিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এ জন্য গ্রামবাসী প্রায় দশ লক্ষাধিক টাকা বাজেট সংগ্রহ করেছেন। গ্রামের প্রত্যেকেই সাধ্যমত অর্থ দিয়ে শরীক হচ্ছেন রাস্তা নির্মাণ কাজে।
সরেজমিন সেনগ্রামে গিয়ে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল, মুক্তিযোদ্ধা হলদর পাল ও ব্যাংকার নীল কান্ত পাল সহ গ্রামবাসী নিজেদেরই রাস্তা ইট সলিংয়ের কাজ করছেন। তাদের সাথে এসে যোগ দিয়েছেন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ ক্ষুদে শিশুরা। বর্ষায় শুকনো পায়ে বিদ্যালয়ে যেতে তারা এই কষ্ট করছে। তারা মনে করে এবার দুর্ভোগ লাঘব হবেই।
সিলেট সুলতানপুর সড়কের কলাবাগান থেকে খালোমুখ সড়ক গিয়ে লেগেছে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে। কলারবাগান খালোমুখ সড়কের বৈরাগীবাজার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার একটি সংযোগ সড়ক সেনগ্রাম হয়ে দক্ষিণ দিকে গিয়ে মিলেছে জালালপুর মোগলাবাজার সড়কে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক পাকা করণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের দ্বারস্থও হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই সড়ক পাকা করণের উদ্যোগ না নেয়ায় এক পর্যায়ে অনেকটা আশাহত হয়ে এলাকাবাসী নিজেরাই সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সকলেই বসেন সভায়। যোগ দেন যুবক, তরুণ ও ছাত্রীছাত্রীরা। প্রত্যেকে যে যার সাধ্যমত রাস্তা নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সিদ্ধান্ত হয় গ্রাম থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে ইট বালু ক্রয় করা হবে। আর গ্রামবাসী নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ কাজ করবেন। ইতিমধ্যে দেড় কিলোমিটার রাস্তার অর্ধেকেরও বেশি ইট সলিং সম্পন্ন হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল বলেন, বৈরাগীবাজারকে কেন্দ্র করে ২ টি মাদ্রাসা, ১টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এই রাস্তাটি নির্মাণ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ছাত্রছাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি আরো দুটি জনবহুল সড়কের সাথে লিংক স্থাপন করেছে। রাস্তা পাকা করণের ব্যাপারে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কোন জনপ্রতিনিধিরই সহযোগিতা পাচ্ছি না। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই আমরা সড়কটি ইট সলিংয়ের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। এতে করে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আমরা মনে করি।