বিয়ানীবাজারে বিএনপি-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমূখী সংঘর্ষ ,আহত ২০ আটক ১
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিয়ানীবাজারে বিএনপি’র সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমূখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেলে পৌরশহরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিয়ানীবাজার পৌরশহরও আশপাশ এলাকা। এসময় পথচারীসহ উভয়পক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুদ্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা অন্তত: ৫টি গাড়ী ভাংচুর করে। যার ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পৌরশহরসহ আশপাশের পরিস্থিতি। বন্ধ হয়ে যায় পৌরশহরের দোকানপাঠ ও বিপণী বিতানগুলো। দ্বিগ¦দিগবিদিগ ছুটোছুটি করতে থাকের সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এসময় ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৭ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে এবং এম.সাইফুর রহমান (৩৭) নামের এক যুবদল নেতাকে আটক করে নিয়ে যায়। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌরশহরসহ আশপাশ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও পুলিশের দাবী,পরিস্থিতি শান্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট জেলায় হরতালের সমর্থনে অবরোধের ৫ম দিন আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পোষ্ট অফিস মোড়ে আসা মাত্র পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। পুলিশী বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ মিছিলকারীদের উপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে দাঁড়াতে না পেরে পুলিশ পিছু হটলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে মিছিলকারীরা। তারা শহরের দক্ষিণ বাজার এবং কলেজ রোড মোড়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পুলিশের উপর চড়াও হলে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যায় পুলিশ। পরে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে একত্রিত হয়ে মিছিলকারীদের উপর হামলা চালালে পিছু হটে মিছিলকারীরা। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭ রাউন্ড গুলি ও ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এম. সাইফুর রহমান নামে এক যুবদল নেতাকে আটক করে। আর সংঘর্ষের সময় পথচারীসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আত্মগোপন করেছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌরশহরসহ আশপাশ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর আসামীদের আটকে অব্যাহত রয়েছে পুলিশী অভিযান।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল বলেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপ্রিয় মিছিলে গুলি চালিয়ে বাকশালী আচরণ করেছে। তিনি বলেন, গুলি চালিয়ে কোন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি এই স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারও পারবেনা। আমরা জণগণের অধিকার আদায়ে যে আন্দোলন শুরু করেছি তা সফল না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।
এব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুবের আহমদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ রাউন্ড গুলি ও ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশৃঙ্খলাকারীদের আটকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য,গত ৫ই জানুয়ারী “গণতন্ত্র হত্যা দিবস” উপলক্ষে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে হামলা চালায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরাও ইট পাটকেল দিয়ে পুলিশের উপর পাল্টা আক্রমণ চালালে শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। সংঘর্ষে বিএনপির অন্ততঃ ২৫জন নেতাকর্মী আহত হয়। আর আটক করা হয় একজনকে। এরপর দিন ৬ই জানুয়ারী বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ উপজেলা বিএনপি সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল, সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াদুদ রোকন চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল খাঁনসহ ৪২জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীর উপর মামলা দায়ের করে।