আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ তৃণমূল ও রাজপথের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। শুধু আন্দোলন চালিয়ে গেলে হবে না। আন্দোলন সফলতায় নিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন থামানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, এ আন্দোলন থেমে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে দেশ। ক্ষতি হবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস’ উপলক্ষে রবিবার লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার পর যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে এ সব কথা বলেন তিনি। ইস্ট লন্ডনের অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তারেক রহমান বলেছেন, ‘আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া হবে না। যেদিন হাসিনা বিদায় হবে, সেদিনই নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে। এর আগে কারও কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। চলমান আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’
পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনারা অবস্থান পরিবর্তন করে মানুষের পক্ষে অবস্থান নিন। এখনই সময়। দেশের ১৮ থেকে ২০ কোটি মানুষ আপনাদের কাছে দেশটাকে আমানত দিয়েছে। সেই আমানত মানুষের কাছে সুষ্ঠুভাবে ফেরত দিন।
ঢাকা শহরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে সারাদেশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তেমনিভাবে ঢাকার নেতাদের কাজ হবে ঢাকা শহরের একটি এলাকা থেকে অন্য এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, পুলিশ-র্যাব ছাড়া তাদের কোনো ক্ষমতা নেই।’
শেখ হাসিনার বিচার করা হবে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনী অফিসারদের হত্যার জন্য, আইটি সেক্টরের নাম করে তার ছেলের টাকা লুট করার জন্য এবং হেফাজতে ইসলামের ওপর হামলা, ইলিয়াস আলীসহ আমাদের নেতাকর্মীদের গুমের অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিচার হবে বলেই শেখ হাসিনা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পান। কারণ তারা জানে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার দেশনেত্রীকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অন্তরীণ করে রেখেছে। বাংলাদেশের নেতাকর্মী-বিশেষ করে তৃণমূলের কাছে আমার প্রশ্ন-কারও মাকে যদি এভাবে অন্তরীণ রাখা হয়, তাহলে তোমরা কী করবে? কেউ কি ঘরে বসে থাকতে পারবে? যদি তাই না হয়-তাহলে কেন দেশনেত্রীকে অন্তরীণ থেকে বের করতে রাজপথে নেমে আসবে না?’
‘আমাদের গন্তব্য দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা’ উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘এই খুনি সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে- এ আন্দোলন সফল না হলে বেশি ক্ষতি হবে গণতন্ত্র ও দেশের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। এই আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে সাধারণ মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’
তারেক বলেন, ‘কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, ‘‘বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না।’’ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বলতে চাই, আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে ওই সব নেতাকর্মীরা যেন আর ঘর থেকে বের হতে না পারে। আন্দোলন সফল করতে হবে। আন্দোলন সফল হওয়ার পর গঠিত সরকারকে আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে শুধু ফেসবুকে বসে থাকলে চলবে না। ঘরে বসে থাকলে হবে না। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে তৃণমূল নেতাকমীরা ৯০-এ স্বৈরাচারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আবার কেন পারবেন না। যখন দেখবেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে কেবল তখনই আন্দোলন বন্ধ হবে। শেখ হাসিনার বিদায় না হওয়ার আগে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। রাজপথ ছাড়া যাবে না।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কায়সার এম আহমেদ। সভায় অংশ নেন দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহবায়ক এমএ মালেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি দেশের একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করেছে।