২ জানুয়ারি সমাবেশ : অনুমতি না মিললেই হরতাল!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অত্যন্ত গোপনীয়তায় আন্দোলনের ছকও তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলনের শুরু হিসেবে ২ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে অনুমতি না দেয়া হলে সেদিন থেকেই হরতালসহ লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
তবে ২ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার জন্য এখনো ডিএমপির কাছে অনুমতি চাওয়া হয়নি। দু’চার দিনের মধ্যে অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত করা হবে বলে নিশ্চত করেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা।
নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তো বলেছেনই যে কোনো সময় আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। খুব তাড়াতাড়িই সে কর্মসূচি আসছে। সারাদেশের নেতাকর্মীদেরকেও সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।
বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক কলঙ্কময় দিন। এই দিনে নিজেদের অধীনে একতরফা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবারো রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। ২০ দল এই নির্বাচনে যায়নি। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকার এক বছর পূর্ণ হবে ৫ জানুয়ারি। এ দিনে ২০ দল প্রতিবাদে ফেটে পড়বে, রাজপথ উত্তাল করবে সেটাই স্বাভাবিক। তেমন পরিকল্পনাও ছিল। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশ করে সেখান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন পরবর্তী কর্মসূচির রূপরেখা দিতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাই বিএনপিকে ওইদিন সমাবেশ করার অনুমতি নাও দেয়া হতে পারে। সে জন্য ২ জানুয়ারি ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করা হবে। দু’চার দিনের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী বা পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠিও দেয়া হবে। তবে সমাবেশের অনুমতি না মিললে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতালের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের কর্মসূচি শুরু হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ সমাবেশে বাধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর এই অযুহাতে প্রশাসন গাজীপুরে জনসভা করতে নাও দিতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি দেয়া হবে।
জোটের একাধীক শীর্ষ নেতা জানান, সরকার বুঝতে পারছে না যে, তাদের অবস্থা কতোটা নড়বড়ে হয়ে আছে। সরকার পতনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেয়ার ভার দেয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আমাদের কর্মসূচি থাকবে। আমরা রাজপথে থেকে সেই কর্মসূচি সফল করবো।
জোটের এক নেতা বলেন, ‘২ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না দিলে লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমেই এই সরকারের পতন হবে।’
এদিকে আন্দোলন কর্মসূচি সফল করার জন্য ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করবে ২০ দলীয় জোট। সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর ২০ দলের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকার পতনের আগামী আন্দোলনে ২০ দল যেন একজোট হয়ে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে সে জন্য ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় ২০ দল লিয়াজোঁ করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করবে। এ বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া খুব শিগগিরই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘৫ জানুয়ারির আগেই সরকারের উচিৎ আমাদের দাবি মেনে নেয়া। কিন্তু সরকার সে দিকে যাচ্ছে বলে মনে হয় না। তাই দল ও জোট ৫ জানুয়ারির আগেই আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যেকোনো জনসভা থেকেই চেয়ারপারসন এই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ২৭ তারিখে গাজীপুরে জনসভা করতে না দিলে সেদিন থেকেই আন্দোলনের শুরু হবে।’
২ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আলোচনার পর্যায়ে আছে। ক্ষমতাসীনদের আচরণের উপর নির্ভর করে আগামীর আন্দোলনের ছক অনুসারে শিগগিরই মাঠে নামবে বিএনপি। সেটা হতে পারে চলতি মাসের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারি মাসের যে কোনো সময়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম জানান, ‘৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে দিনটিকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি থাকবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ‘এবারের আন্দোলন কর্মসূচি হবে অত্যন্ত কঠোর। এ অবৈধ সরকারকে হঠাতে যেমন কর্মসূচি দেয়া দরকার তেমন কর্মসূচিই দেয়া হবে।’