‘রক্তক্ষয়ী ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রক্তাক্ত বিদ্রোহের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে কোথাও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা আগেই জানাতে কর্মকর্তাদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজিবি দিবসে শনিবার পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে বার্ষিক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর বীরউত্তম ফজলুর রহমান মিলনায়তনে দরবারে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
শেখ হাসিনা গত মেয়াদে সরকার গঠনের দুই মাসের মাথায় বার্ষিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই দরবার হলেই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল।
তখন দুদিন পিলখানা ছিল বিদ্রোহী জওয়ানদের দখলে। তাদের নিরস্ত্র করার পর দেখা যায়, নিহত হয়েছেন বিডিআরের কর্মরত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন।
ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বিডিআর থেকে বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। পোশাক ও আইনেও আসে নানা পরিবর্তন।
দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় বিজিবি আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরার পর দরবারে এসে প্রধানমন্ত্রী রক্তক্ষয়ী ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
‘কোথাও কোনো সমস্যা হলে, আপনারা কোনো দ্বিধা করবেন না। সেটা আমাদের জানাবেন। সমাধান আমরা করতে পারব।… কোনো সমস্যা হলে আগে আমাকে জানাবেন এবং আমাদের বলবেন।’
‘যে হৃদয় বিদারক ঘটনা এখানে ঘটে গেছে, তেমন কোনো ঘটনা কোনো সুশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘটুক, তা আমরা চাই না,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত চিন্তা করে করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না, যাতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট বা আপনারা যে বাহিনীতে আছেন, তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বা কোনো রকম বদনাম হয়।
সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি নির্দেশ অনুযায়ী অন্যান্য কাজেও বিজিবির ভূমিকার প্রশংসা করে এই বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পুনর্গঠনে বিজিবিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে কমান্ড বিকেন্দ্রিকরণ করা হয়। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করতে ‘বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো’ স্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বাহিনীকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এই বাহিনীকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
সীমান্তে টহল সুবিধা বাড়াতে ভারত সীমান্তে প্রস্তাবিত ৯৩৫ কিলোমিটার এবং মিয়ানমার সীমান্তে ২৮৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি সরাকারের বিবেচনাধীন আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা, মিয়ানমার সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসন ও পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন সময় সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সদস্যদের কাজের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
বিজিবির সক্ষমতা বাড়াতে নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বাহিনীর জন্য আগে ৪৪ হাজারের কিছু বেশি জনবলের প্রাধিকার ছিল, যা যথেষ্ট ছিলো না। বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী বাহিনীর জনবলের প্রাধিকার আগের চেয়ে ৮ হাজার ৬৬২ জন বাড়ানো হয়েছে।
২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োগের কথাও আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
বিজিবি সদস্যদের রেশন ও বাসস্থান সুবিধা বাড়ানো এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপের কথাও বলেন তিনি।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, দেশ যদি উন্নত হয়, আপনাদের পরিবারই ভবিষ্যত প্রজন্ম উন্নত জীবন পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা জানান।
দরবারে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের কথাও শোনেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিবি মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।