পারলেন না কয়েস লোদী : তাই রণে ভঙ্গ
অহী আলম রেজাঃ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র পদ নিয়ে এখন নিশ্চুপ কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। নিজের করা রিটও তুলে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কোন বক্তব্যও নেই তার। তবে, পদ বহাল রাখার জন্য আওয়ামীলীগ পন্থি কাউন্সিলরদের নিয়ে গোপন বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শেষ মুহুর্তে কয়েস লোদী থামলেন কেন? এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। পদের জন্য যেখানে মামলায় জড়িয়েছেন সেখানে নিজ থেকে সড়ে দাড়ানো নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। দলেও চলছে কানাঘুষা। আগামী কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন সিলেট মহানগর বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদক। বহুধাবিভক্ত সিলেট বিএনপিতে কয়েস লোদী ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান অনুসারী। দল এবং দলের বাইরে অনেকটা ক্লিন ইমেজ ছিল তাঁর। সাংগঠনিক দক্ষতাও ছিল অন্যদের চেয়ে ভালো। সামাজিক, সাংস্কৃতিক,ক্রীড়াক্ষেত্রেও রয়েছে তার অবদান। বারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর হাত ধরেই রাজনীতির পথ হেটেছেন কয়েস লোদী। বর্তমানে দু’জনই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর অনুসারী। কিন্তু ২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্যানেল মেয়র নিয়ে দন্ধ দেখা দেয়। শুরুতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আপত্তি সত্তেও বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরদের চাপে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে প্যানেল করতে বাধ্য হন। কিন্তু কয়েস লোদীর একক নীতির কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন খোদ বিএনপি পন্থি কাউন্সিলররাও।
গত ১০ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) নগর ভবনের সভাকক্ষে কাউন্সিলরদের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কাউন্সিলররা। মূলত প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর উপরই ক্ষোভ ঝাড়েন তারা । কাউন্সিলররা লোদীর বিরুদ্ধে সিনিয়রদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ আনেন। তিনি অন্য কাউন্সিলরদেরকে পাত্তা দেন না, এড়িয়ে চলেন- এমন অভিযোগও আনেন কাউন্সিলররা। তারা অভিযোগ করেন, কয়েস লোদী তাঁর অফিসে ‘প্যানেল মেয়রের কার্যালয়’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন।
অথচ তিনি এটা লিখতে পারেন না। সেই বিধান নেই। তারা বলেন, একমাত্র মেয়রের অনুপস্থিতিতেই প্যানেল মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কয়েস লোদী মেয়র থাকা অবস্থায়ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ প্যানেল মেয়র কয়েস লোদীকে পদত্যাগের আহবান জানালে সভাকক্ষ আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ওই কাউন্সিলরকে বলেন, ‘আপনি এটা বলার অধিকার রাখেন না’। এরপর মেয়র আরিফ বাকি সবাইকে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে সবাই বেরিয়ে আসেন। এরপর মেয়র সকল কাউন্সিলরদেরকে নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠকে বসেন। এ সময় বিষয়টি সমাধানের জন্য মেয়র আরিফ সিনিয়র কয়েকজন কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারা কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারায় প্যানেল মেয়রের প্রতি অনাস্থা প্রন্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে গোপন মতামত নেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ২৯ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে ২৬ জন কাউন্সিলরই প্যানেল মেয়র লোদীর বিপক্ষে মতামত দেন। লোদী নিজেসহ মাত্র ৩ জন তাঁর পক্ষে মতামত দেন।
গত ২০ অক্টোবর কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব না দিয়েই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চীন সফরে যাওয়ায় লোদী পরদিন হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পিটিশনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবকে প্রতিপক্ষ করা হয়।
তবে গত ১৩ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন নিয়ে করা রিট পিটিশন প্রত্যাহার করে নেন প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এদিকে ১০ জুনের অনাস্থা প্রস্তাব গত ১৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলরদের ভোটে গৃহীত হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নং ওর্য়াডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামিম বলেন ‘কাউন্সিলর লোদী নিজেই নিজের ক্ষতি করেছেন। তাকে ভদ্র মনে করে আমার বাসায় বসে প্যানেল মেয়র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু এর পর তার ভদ্রতার মুখোশ উন্মোচন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনকারী প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নামে কেউ নেই। তাকে আমরা কেউ চিনি না। তবে রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী) নামের কাউন্সিলর আছেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ন সম্পাদক, বর্তমান আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য আজমল বখত চেধৈুরী সাদেক বলেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কয়েস লোদী একই দল এবং একই গ্রুপের । তাদের এ দন্ধ দলের জন্য ক্ষতির কারণ। সরকার তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ কাজ তাদের দিয়ে করাতে পারে।
রিট পিটিশন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানতে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর বক্তব্য জানতে হাউজিং এস্টেট এলাকায় তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।