অলিভ ট্রির চার শিশা-কন্যা নিয়ে কৌতূহল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের অলিভ ট্রি চার ললনা মাতিয়ে রাখতো। তারাই ছিল অলিভ ট্রির আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। শুধু তাই নয় মধ্যরাত অবধি তাদের ঘিরেই চলতো আমোদ-ফুর্তির আসর। অলিভ ট্রিতে পুলিশের অভিযানের পর এখন মানুষের মুখে মুখে সিলেটের ওই ললনাদের কেচ্ছাকাহিনী। তবে পুলিশের অভিযানের পর তাদের আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি। অনেকটা আড়ালে চলে গেছে তারা। ওই চার ললনা হচ্ছে- মাহি, শোভা, মিতালি ও নাহিদা।
উঠতি যুবকদের কাছে এরা খুবই পরিচিত। এক নামেই চেনে সবাই। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে তারা। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে পর্নোজালে। এরপরও তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড থেমে নেই।
সর্বশেষ তারা সিলেটের ধোপাদিঘীরপাড়ের অলিভ ট্রি’র উঠতি যুবকদের কাছে হয়ে উঠেছিল রাতের রানী। অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী কয়েকজন যুবক জানায়, সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই মাহি, শোভা, মিতালি ও নাহিদ সেখানে যেতো। প্রতিদিন তারা নতুন নতুন যুবকদের নিয়ে যেতো। ওখানে গিয়ে তারা হারিয়ে যেতো নেশার রাজ্যে। মধ্যরাত পর্যন্ত ওই হোটেলে বসে শিশা সেবনের পর প্রেমিকদের নিয়ে অভিসারে যাওয়া ছিল তাদের নিত্যদিনের রুটিন।
প্রেমের ছলে টাকাওয়ালা যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী বেশ কয়েক যুবক তাদের হাতে প্রতারিত হলেও মান-সম্মানের ভয়ে কেউ মুখ খোলে নি।
অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী শোভাকে এক নামেই চেনেন সিলেটের উঠতি যুবকরা। ৫-৬ বছর আগে শোভা পা বাড়ায় শোবিজ অঙ্গনে। লন্ডন থেকে আসা প্রডিউসারদের মন জয় করে কয়েকটি আঞ্চলিক নাটকে নায়িকা ছিল ও কিছু কিছু মিউজিক ভিডিওতেও সে অভিনয় করে। প্রথমে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও সুন্দরী হওয়ায় শোভা একসময় সিলেটে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
থার্টিফার্স্ট নাইট, ডিজে নাইট ও হোটেলের পার্টিতে সে হয়ে ওঠে বিশেষ আকর্ষণ। সে ছিল সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু তার বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে স্থানীয় লোকজন বিচার সালিশ করে শোভাকে এলাকাছাড়া করে। এখন শোভার ঠিকানা নগরীর বিভিন্ন ফ্ল্যাটবাড়ি।
অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী ধনীর দুলালদের ধরে নিয়ে রাতের পর রাত কাটায় সেখানে। বিভিন্ন সময় অচেনা যুবকদের স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়েছে। সিলেট শহরতলীর বাংলোবাড়ি, পর্যটন স্পট জাফলং, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন হোটেলে রয়েছে শোভার নেটওয়ার্ক। অভিযোগ উঠেছে, নিজেকে মডেল কন্যা পরিচয় দিয়ে শোভা ইয়াবা ব্যবসাতে জড়িয়ে পড়েছে।
সিলেটের অলিভ ট্রির আরেক পরিচিত মুখ মাহি। সিলেটের উঠতি যুবকদের কাছে সে এক পরিচিত নাম। স্থানীয়ভাবে ডিজে ড্যান্স দিয়ে সে পরিচিতি পায়। বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়িতে তাদের নিয়ে কাটিয়েছে রাতের পর রাত। আর এরই ফাঁকে জড়িয়ে পড়ে পর্নোজালে। তার অবাধ মেলামেশার একটি ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেয়া হয় ইন্টারনেটে।
তখন সে বলেছিল, তারই এক প্রেমিক তার সঙ্গে প্রতারণা করে এই ভিডিওটি করেছে। এদিকে, ওই ভিডিও ক্লিপটি প্রচারের পর ঢাকায় কিছু দিনের জন্য গাঢাকা দিয়েছিল মাহি। পরে চলে আসে সিলেটে। সর্বশেষ সিলেটের অলিভ ট্রিতে শিশা কন্যা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সে।
সিলেটের আরেক কন্যা মিতালি একই ভাবে পা বাড়িয়েছে উন্মাতাল জগতে। পার্লার ব্যবসায়ী হিসেবে তার হাঁকডাক নগরীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
অলিভ ট্রির কয়েকজন গ্রাহক জানিয়েছেন, মিতালিও বিভিন্ন সময় বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে ওই রেস্টুরেন্টে যাতায়াত করতো। গভীর রাত পর্যন্ত বসে বসে শিশা সেবন করতো। রাতে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে বেরিয়ে পড়তো অজানার উদ্দেশে।
এই তিন জনের পথ অনুসরণ করে অলিভ ট্রিতে নিয়মিত যাতায়াত বাড়িয়েছে নাহিদা। তাকেও বিভিন্ন সময় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানে বসে শিশা সেবন করতে দেখা গেছে। ধোপাদিঘীরপাড় এলাকা সূত্রে জানা গেছে, অলিভ ট্রির গোপন কর্মকান্ডেরর বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর রোববার রাতে সওদারটুলা এলাকায় বৈঠক হয়েছে। এতে শিশাসহ মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে এলাকার মানুষ ঐকমত্য প্রকাশ করে।
ওদিকে, সিলেটের অলিভ ট্রি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে সিলেটে। গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘সীমান্তিক’ আয়োজিত মাদকবিরোধী বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, অলিভ ট্রিতে পুলিশের অভিযানের খবর না ছাপতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।
তবে বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা মাদক রোধে এরকম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন।