হাওয়ায় চলা মোটরসাইকেলের উদ্ভাবক নিহত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাতাসচালিত মোটরসাইকেলের উদ্ভাবক হাফেজ নুরুজ্জামান (৩০) আর নেই। রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে প্রাইভেটকারের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে নুরুজ্জামানসহ চার যাত্রী নিহত হন। নুরুজ্জামান হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের কৃষক সৈয়দ আলী ও রোকেয়া বেগমের ছেলে।
স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাটিহাতা বিশ্বরোড ফাঁড়ির সার্জেন্ট আব্দুন নূর জানান, রোববার দুপুরে নুরুজ্জামানসহ ছয় যাত্রী প্রাইভেটকারযোগে ঢাকা যাচ্ছিলেন। কারটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সোহাগপুরে পৌঁছলে এর চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় কারটি বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে থাকা বালুভর্তি ট্রাকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলেই অজ্ঞাত পরিচয় তিন যাত্রী নিহত হন। আহত হন নুরুজ্জামানসহ চার যাত্রী। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নুরুজ্জামানকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, ৫ মার্চ হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাতাসচালিত মোটরসাইকেল চালান উদ্ভাবক হাফেজ মো. নুরুজ্জামান। তার উদ্ভাবিত মোটরসাইকেল চালাতে তেল-পেট্রোল লাগে না। বাতাসকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে চলে এ পরিবেশবান্ধব সাইকেল।
তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নুরুজ্জামান সবার ছোট। তিনি চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ৫ মার্চ উদ্ভাবিত পরিবেশবান্ধব মোটরসাইকেল সম্পর্কে নুরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘কাঠ, লোহা ও এ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি মোটরসাইকেলটি শুধু বাতাসকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে। এ সাইকেল চালাতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৯১ পয়সা।’
তিনি ওই সময় আরও বলেছিলেন, ‘সাইকেলটি চালাতে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে না। হাইড্রোলিক মেকানিজম সংযুক্ত গিয়ারবক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি সিলিন্ডারে বাতাস সঞ্চিত হবে। পরে ওই বাতাসের চাপে সাইকেলটি চলবে।’
নুরুজ্জামান বলেন, ‘২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি এ সাইকেল তৈরিতে হাত দেন। এটি তৈরি করতে তার খরচ পড়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে বাজারজাত শুরু হলে খরচ কমে আসবে এক লাখ টাকায়।’
ওই সময় তিনি উদ্ভাবিত মোটরসাইকেলটি বাজারজাত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। নুরুজ্জামানের এক আত্মীয় জানান, আগামী বছর তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আর সেখানে যাওয়া হলো না, স্বপ্নও পূরণ হলো না।