নানকা পরিবারের হাতে ধরাশায়ী রাগিব আলী
লোভাছড়া চা বাগানের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন মূল মালিকের হাতে
কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ কানাইঘাট লোভাছড়া চা বাগানের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বাগানের সত্ত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা জেমস লিও ফারগুশন নানকার পরিবারের সদস্যরা। গত রবিবার বাগানের কর্তৃত্ব নিয়ে নানকার পরিবারের সদস্যদের সাথে অনাকাক্ষিত ঘটনার জের ধরে বাগানের একাংশের লীজ গ্রহীতা রাগীব আলীর মনোনীত স্টাফরা বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পুরো লোভাছড়া চা বাগান এখন নানকা পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। গতকাল সোমবার সরজমিনে লোভাছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায় বাগানের দৈনন্দিন কাজকর্ম করছে চা শ্রমিকরা। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। এদিকে গত রবিবারের ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী খবর পাওয়া গেছে। রাগীব আলীর মনোনীত বাগানে কর্মরত স্টাফদের অভিযোগ তাদেরকে জিম্মি করে সবকিছু কেড়ে নিয়ে রবিবার বিকেল ৪টা দিকে বাগান থেকে নানকা ও তার লোকজন একটি জীপে তুলে অপহরণের চেষ্টাকালে স্থানীয় বড়বন্দ বাজার এলাকা থেকে পুলিশের সহযোগিতায় রাত ৮টার দিকে তারা উদ্ধার হন। কিন্তু তাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাগানের সত্ত্বাধিকারী জেমস লিও ফারগুশন নানকা। তার অভিযোগ জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাগান থেকে তার পরিবারের মালিকানা উচ্ছ্বেদ করার জন্য ভূমি খেঁকো রাগীব আলী ও তার মনোনীত বাগানের কর্মরত স্টাফরা কয়েকবার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ রবিবার তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাগীব আলীর লোকজন অপহরণের চেষ্টা করলে খবর পেয়ে এলাকার শত শত লোকজন বিভিন্ন স্থানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে বড়বন্দ বাজারে জীপ গাড়ী আটকিয়ে জনতা তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন রাগীব আলীর মনোনীত বাগানের ম্যানেজার ও স্টাফদের উপর হামলার চেষ্টা করলে তিনি নিজে পুলিশকে ফোন করে তাদেরকে জনরোষানল থেকে মুক্ত করেন। এছাড়া রাগীব আলীর নিয়োজিত বাগানের ম্যানেজার জহিরুল হক ও অন্যান্য স্টাফরা তাদের মালামাল লুটপাট, বাগানের স্টাফ কোয়ার্টারে যে ভাঙ্গচুর ও তছনছের অভিযোগ এনেছেন তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে চা শ্রমিকরা জানিয়েছেন। লোভাছড়া চা বাগানের মালিকানা নিয়ে নানকার সাথে বাংলোতে কথা হলে তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে পৈত্রিক সম্পত্তির সূত্রধরে চা বাগানের মালিক তার পরিবারের সদস্যরা। ১৪ বছর পূর্বে তিনি একবার ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ার পর ভূমিখেঁকো রাগীব আলীর লোলুপদৃষ্টি পড়ে তার চা বাগানের উপর। রাগীব আলী সুকৌশলে তার তিনভাই ও তিন বোনের সাথে ব্যাপক প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার অজান্তে বাগানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামার মাধ্যমে একাংশের লীজ গ্রহীতা হন। কিন্তু টি কোম্পানীর বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্রতারনার মাধ্যমে রাগীব আলী পুরো বাগানটি কর্তৃত্ব নেওয়ার ষড়যন্ত্রের চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তার পরিবারের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করলে রাগীব আলী নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন। এমতাবস্থায় বাগানের মালিকানা রক্ষা করার জন্য বছর খানেক পূর্বে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে আসার পর থেকে রাগীব আলী তাকে বাগান থেকে বিতাড়িত করার বহু চেষ্টা করে আসছে। তিনি সংখ্যালুঘু হওয়ায় রাগীব আলীর নির্যাতন আরো বেড়ে যায় বলে জানান। এমতাবস্থায় বাগানের সত্ত্বাধিকারী জেমস লিও ফারগুশন নানকা গত ১৩/১১/১৪ইং তারিখে সিলেটের জজ আদালতে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা দায়েরের পর রাগীব আলী ক্ষ্যাপে গিয়ে গত রবিবারের ঘটনা ঘটিয়েছেন। স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে বাগানের সত্ত্বাধিকারী নানকার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাগানের বিশাল জায়গা জমি স্থানীয় জনসাধারণ ভোগ দখল করে জীবিকা নির্বাহ করে আসলেও এক্ষেত্রে নানকার পরিবারের সদস্যরা কখনো কোনো কর্তৃত্ব খাটাননি। এছাড়া নানকা তিনবার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রাগীব আলী চা বাগানের শেয়ার নেয়ার পর বাগান এলাকায় সর্বসাধারণের চলাফেরা একপ্রকার বন্ধ করে দেন। এমনকি এলাকার গবাদিপশু বাগানের পরিত্যক্ত এলাকায় চরাতে তার মনোনীত লোকজন বাঁধা নিষেধ করায় রাগীব আলী প্রতি এলাকার লোকজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অপর দিকে গত রবিবার রাতে রাগীব আলীর মনোনীত বাগানের ম্যানেজার জহিরুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী বৈধভাবে লোভাছড়া চা বাগানের লীজ গ্রহীতা। নানকা সাহেব নিজেকে বাগানের মালিক দাবী করছেন তা সঠিক নয়। তিনি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় গত রবিবার আমাদের বাগান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লোভাছড়া চা বাগান সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে কোন অভিযোগ তার কাছে কেউ দেয়নি।