গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ : নারী-শিশু মানবাধিকার নিরবে কাঁদে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানা। সীমান্তবর্তী এই থানায় রুপ যেমন অপরুপা তেমনি এই থানা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। রয়েছে পাথর রাজ্য, শতাধিক পর্যটন এলাকা। এসব সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যাস্থ থেকেছেন এখানকার বর্তমান ও অতীতের জনপ্রতিনিধিরা। যে কারনে এখানে যাতায়াত ব্যাবস্থার উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতিই হয়নি বললেই চলে। যে কারনে এখানে দায়ীত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের প্রায় সকল স্থরের সব দপ্তরের কর্মকর্তারা একপ্রকার স্বাধীন রাজ্যের অধিপতির ন্যায় যে যার মতন আখের গোছাতে ব্যাস্ত। এই থানায় উর্ধতন মহলের তেমন কোন তদারকি নেই বলেই সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলীতে প্রতিয়মান হয়।
সম্প্রতি (১২ নভেম্বর বুধবার ) গোয়াইনঘাট থানার তোয়াক্কুল ইউনিয়নের বীরকুল গ্রামের বাসিন্দারা থানা পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও হয়রানীতে অতিষ্ট হয়ে প্রতিকার চেয়ে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব ও সিলেট প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের দেয়া তথ্যে ফুটে উঠেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের জন হয়রানি ও অত্যাচারের নমুনা।
গোয়াইনঘাট থানার থুবরী শিলচান জলমহাল নিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি সংঘর্ষেকে কেন্দ্র করে পুলিশ যেভাবে পদদলিত করছে মানবাধিকার, নারী ও শিশু অধিকার তা গোটা পুলিশ বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোয়াইনঘাট পুলিশ মেতে ওঠেছে আমানবিক গ্রেফতার বানিজ্যে। একপক্ষের হয়ে পুলিশ গভীর রাতে প্রায় পুরুষশূন্য একটি গ্রামে হানা দেয়। ঘরের
দরজা ভেঙ্গে ঘুমন্ত নারী-শিশুর উপর অমানবিক নির্যাতন করে গুরুতর আহত করে। অতঃপর ফাকা গুলি করে সুপরিকল্পিতভাবে একটি পুলিশ এসল্ট মামলার নাটক সাজায় পুলিশ। জানা যায় ওই রাত ৩টার দিকে বীরকুলি গ্রামের মনির উদ্দিনের স্ত্রী ছালেহা বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমন্ত ছিলেন। পুলিশের ডাক শুনে তিনি ভয়ে একা ঘরের দরজা খুলতে চাননি। এতে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ছালেহা বেগমের ঘরে প্রবেশ করে ছালেহা বেগমকে মারপিট করে আহত করে । পুলিশের বন্দুকের আঘাতে ছালেহা বেগমের বাম হাতে মারাত্বক জখম হয়। গোয়াইনঘাট হাসপাতালে নিয়ে ১২টি সেলই ও অল্প কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে তাকে এসল্ট মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে পুলিশ। এ সময় পাশের ঘরের দুই স্কুলছাত্র ও মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যাবার পথে কয়েক রাউন্ড ফাকা রাবার বুলেট ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ ।
ঐদিন পুলিশের সাথে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। অথচ থানায় দায়ের করা হয় পুলিশ এসল্ট মামলা। ( মামলা নং- ১২/২৫৯)। ওঐ মামলায় গ্রামের নারী শিশু, স্কুল ছাত্র ও শিক্ষকসহ এজাহার নামীয় ৬০ জন এবং অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া বীরকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাংবাদিক ফখরুল ইসলামকেও পুলিশ এসল্ট মামলায় আসামি করা হয়। এর আগে সাংবাদিক ফখরুল গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অপকর্মের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যার প্রতিশোধ নিতে পুলিশ ওই মামলায় সাংবাদিক ফখরুলকে এজহার নামীয় আসামী করে। অথচ ওই সময় ফখরুল গোয়াইনঘাট এলাকায় ছিলেন না।
জানা যায়, পুলিশ প্রতিদিন গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিরীহ মানুষ ও মহিলাদের গ্রেফতার করছে। স্কুল ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাচ্ছে। রোগিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে চালককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই গ্রামবাসী প্রতি মুহুর্তে কাটাচ্ছেন পুলিশি গ্রেফতার আতঙ্কে। ১২ নভেম্বর বুধবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে গোয়াইনঘাট থানার সালুটিকর পুলিশ ফাড়ির এস আই খায়রুল বাশারসহ পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলীকেও গ্রেফতার করে। পুলিশ এসল্ট মামলার একাধিক আসামী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কোন পুলিশ অফিসার কোথাও কোন চিকিৎসা নেয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে গভির উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মানবাধিকার তথ্য পর্যবেক্ষন সোসাইটির সহ সভাপতি ডাঃ বাপ্পি চৌধুরী জানিয়েছেন, আমরা এই বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছি। ইতোমধ্যেই আমরা মানবাধিকার লংঘিত হওয়ার যথেষ্ট প্রমানাধি পেয়েছি। অতি শীঘ্রই আমাদের কার্যকরী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিষয়টি নিয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহন করব।