মৌলভীবাজারে মেলার আয়োজন প্রতিহতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জারীকৃত প্রজ্ঞাপন উপেক্ষিত
আব্দুল হাকিম রাজ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আবারও শুরু হয়েছে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি। অনুমতি না পেলেও মেলার স্টল তৈরীর কাজ চলছে জোরেসোরে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলার ব্যবসায়ীরাও ইতিমধ্যেই মালামাল নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। আইনানুযায়ী- বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ চেম্বার অব কমার্স মেলার আয়োজন করার সুযোগ থাকলেও তা করতে হবে সরাসরি চেম্বার অব কমার্স নিজে। কিন্তু, অন্য কেহ মেলা আয়োজন করতে হলে স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু, এবাওে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কিসের ভিত্তিতে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে তা কারোই বোধগম্য নয়। অপরদিকে, মেলার আয়োজন প্রতিহতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মেলা আয়োজনের পক্ষে রয়েছে দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রী এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অবস্থান মেলা আয়োজনের বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছর ধরেই মৌলভীবাজার শহরে বিভিন্ন নামে আয়োজিত মেলার বিরোধিতা করে আসছে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি। সর্বশেষ গত ২০১৩ সালে ব্যবসায়ী সমিতি মেলার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত প্রতিবাদ জানায়। এ নিয়ে একাধিক মাধ্যমে একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়। এ নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির বিক্ষোভ মিছিল হয়। তা সত্তেও মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ী সমিতি মেলায় হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে মেলাস্থল। শেষমেষ, ঈদের পরে মেলা চালানোর এবং ভবিষ্যতে মেলার আয়োজন না করার শর্তে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে ঈদের পরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মেলা অনুষ্ঠানের জন্য সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল সেসময়। পরে নাকি বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল মেলার আয়োজক পক্ষ। তবে, এবারে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ বরাদ্দ নিয়ে চলছে ভাওতাবাজী। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী- শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের খেলাধুলা ও সকল অনুষ্ঠানাদি ছাড়া অন্য কোন কিছুর জন্যই বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করা যাবেনা। সে হিসাবে, যেকোন ধরনের মেলা অনুষ্ঠানের জন্য কোন বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনী। তা সত্তেও মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেই চলছে এবারের বাণিজ্য মেলার আয়োজন। আয়োজক পক্ষ এখনও পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি না পেলেও, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র দাশ। এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান- গতবারের ন্যায় এবারও নাকি বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশেই মেলা অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, এমনিতেও নাকি বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠানের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারে আইনগত কোন বাঁধা নেই। অপরদিকে, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান- এ সংক্রান্ত আবেদন পেয়েছি, অনুমতি দেয়া যায় কি-না তা যাচাই-বাছাই চলছে, সম্ভব হলে দেয়া হবে। তবে, এখনও অনুমতি দেয়া হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে কি-না জানা নেই। বিষয়টি আমি দেখব। তবে, যা কিছুই করা হোক তা অবশ্যই আইন মেনেই করা হয়ে থাকবে, বেআইনীভাবে কিছু করা হবেনা। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মদেও সাথে কথা বলে জানা গেছে- এ বিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেলা আযোজন সম্পর্কে তিনি কোনকিছুই জানেননা। অথচ, মেলা আয়োজনের জন্য আয়োজক পক্ষ এ পর্যন্ত বেআইনীভাবে সবকিছু করে যাচ্ছে কিভাবে- এ প্রশ্ন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিসহ সচেতন মহলের। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন- সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বাণিজ্য মেলা প্রতিহত করা হবে যেকোন মূল্যে।