ম্যাজিষ্ট্রেট’র সামনে কান ধরে উঠবস : তবুও ভাল হয়নি ফাহমিদা

Fahmida-BRTAসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট বিআরটিএ অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ফাহমিদা। সিলেট বিআরটিএ’র লাইসেন্স শাখার অনেক গুরু দায়ীত্বও তার কাছে। তবে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। খোদ যোগাযোগমন্ত্রী অবায়দুল কাদেরও তার উপর ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় তার অনৈতিক কর্মকান্ডের উপর অনেকগুলো সংবাদ পরকাশিত হয়েছে। এই সকল সংবাদের উপর ভিত্তি করেই গত বছর সরাসরি আকস্মিক সিলেট বিআরটিএ অফিসে অভিযান চালান যোগাযোগ মন্ত্রী অবায়দুল কাদের। মন্ত্রী ফাহমিদাকে ভাল হয়ে যাবার কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন “ফাহমিদা ভাল হয়ে যাও। তোমার বিরুদ্বে বিস্তর অভিযোগ আমি শুনেছি। আমি কিন্তু আগের মতন আর কাউকে ধমকাই না। আমি এবার একশন নেব। তোমাকে শেষ সুযোগ দিয়ে গেলাম। তোমার বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ যেন না শুনি।”। এ সময় মন্ত্রী তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়ে যান অসৎ কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। মন্ত্রী এমন দায়িত্ব দিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিআরটিএ অফিসে ফিরে এসেছে সেই পুরনো অবস্থা। সরকারি দফতর হলেও অফিসের চেয়ার-টেবিলজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই বসে থাকে দালালরা। এমনকি অফিসে সংরক্ষিত ফাইল ভলিউম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অনেকটা দাফতরিক কাজও সেরে নেয়। তবে মন্ত্রীর দেয়া এই তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালের জুন মাসে সুরমা টাইমস এ ফাহমিদার অপকীর্তির উপর ভিত্তি করে “ফাহমিদা ভাল হয়ে যাও” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এ সময় নড়ে চড়ে বসে সিলেট বিআরটিএ অফিস। ফাহমিদার উপর এক মাসের মধ্যে ব্যাবস্থা গ্রহন করবে বলে জানিয়েছিল সিলেট বিআরটি’র উর্ধতন মহল। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। জানা গেছে ফাহমিদার ব্যাপারে সিলেট বিআরটিএ তে এসে কোন এডি ফাহমিদার ব্যাপারে খুব বেশি নাক গলাতে চান না। ফাহমিদার ব্যাপার সব এডিরাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন, ভয় পান ফাহমিদাকে। কারন হিসেবে জানা গেছে, কোন এডি ফাহমিদার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে চাইলেই তার উপর উল্টো ব্যাবস্থা নেন ফাহমিদা। সুহাসিনী সুদর্শনা ফাহমিদার মোক্ষম অস্ত্র তার দেহ। তিনি এর আগেও অকারনে বিভিন্ন এডির বিরুদ্ধে তার গায়ে (বিশেষ অংগে) হাত দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। যে কারনে মান ইজ্জতের ভয়ে কোন এডি ফাহমিদার ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়ার সাহস পাননা।
এর আগে র‍্যাব ৯ এ কর্মকর্তাকেও হেস্তনেস্ত করেন ফাহমিদা। জানা গেছে ফাহমিদার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এরপর র‍্যাব ৯ ও সিলেট বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। র‍্যাবের এক কর্নেল নাকি ফাহমিদার আপন খালাত ভাই এমন মন্তব্য করে দাপট দেখান ফাহমিদা। সুরমা টাইমস ফাহমিদার উপর সংবাদ প্রকাশ হবার পর থেকে ফাহমিদা প্রচার করতে থাকেন তিনি নাকি মুন্ত্রী পরিবারের লোক। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার আত্মীয়। সিলেট বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন, নবায়ন, নাম পরিবর্তনসহ ফাহমিদার নিয়ন্ত্রনে থাকা বেশ কিছু নিত্য নৈমিত্তিক বানিজ্য এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ফাহমিদা। কিন্তু বিধি বাম !
সিলেট বিআরটি এ অফিসে দালালদের উৎপাত ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান আদালতের ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে দালালরা কৌশলে সটকে পরেন বলে বিআরটি অফিসে আগত প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান। এসময় বিআরটিএ এর লাইসেন্স পরিদর্শক ফাহমিদা সহ ৩ জন কে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, আজাদ মিয়া, লিয়াকত, ও কামাল আহমদ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট কাজী আরিফুর রহমান (এনডিসি)। এসময় আটককৃতদের পক্ষাবলম্বন করে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়ায় ওই শাখার অফিস সহকারী ফাহমিদা বেগমকেও আটক করা হয়।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট কাজী আরিফুর রহমান (এনডিসি) বলেন আমরা বেশ কিছূ ঘটনা দেখতে পাই যা আমাদের কাছে মনে হয়েছে আইন সম্মত নয়। তাই ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমার অফিসে নিয়ে আসি। পরে শুধু কামাল আহমদ কে ৫০০ টাকা জরিমানা করি। আর বাকিদের সতর্ক করে ছেড়ে দেই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক জানান,এই অফিসে টাকা ছাড়া একটি পাতাও নড়ে না। তবে টাকা দিলে বিআরটি অফিসে বাঘের চোখ ও পাওয়া যায়। আর আমরা যারা সরাসরি কাজ করাতে যাই তাদের কে বিআরটি অফিসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা লেফরাইট করান, আর লম্বা আইন-কানুন দেখান। অথচ দালালের মাধ্যমে এসব কাজ আমরা সহজেই করতে পারি। দালালদের সাথে তাদের সবসময়ই সু-সম্পর্ক।
এ বিষয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট অফিসে বসা বিআরটি অফিসের কর্মকর্তা মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী বলেন, দালালদের উৎপাতে আমরাও অতিষ্ঠ। তবে বিআরটি অফিসের কর্মকর্তারা কেন দালালদের সাথে সু-সম্পর্ক্য রাখে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারেনি।
এদিকে অভিযানের সময় অফিস কক্ষে ছিলেন না বিআরটি এ সিলেটের এডি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ফোনে জানান, এক শ্রেনীর দালালরা বিআরটি এ অফিসে দলবদ্ধ হয়ে আসে। তারা আমাদের কাজে নানা অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাদের বিরুদ্ধে আমরাও বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত করি। এই অভিযান এখন থেকে ধারাবহিক ভাবে চলতে থাকবে। এছাড়া এই অফিসের দালালদের তালিকা আমার কাছে আছে আপনারা এসব দালাল দেখা মাত্র আমাকে ইনফর্ম করলে আমরা অভিযান পরিচালিত করবো।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট কাজী আরিফুর রহমান(এনডিসি) বলেন,বহুদিন ধরে বিআরটি অফিস সম্পর্কে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছিলো। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সাড়ে এগারোটা থেকে সিলেট বিআরটিএ অফিসে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করি।