সিলেট সরকারী আলীয়া ময়দানে গায়েবানা জানাজায় জনতার ঢল
ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম-এর প্রতি সরকারের নিষ্ঠুর আচরণ জাতি কখনও ক্ষমা করবে না
হাজার হাজার জনতার স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা। গতকাল শনিবার বেলা ২ টা ৩০ মিনিটে জানাজা সম্পন্ন হলেও জোহরের নামাজ শেষ হতে না হতেই দলে দলে লোকজন আলীয়া মাদরাসা ময়দানে সমবেত হতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই জানাজার নির্ধারিত স্থান লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। গায়েবানা জানাজার জন্য প্রস্তুতকৃত আলীয়া ময়দান এক বিশাল জনসমুদ্রের রূপ নেয়। জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, সিলেট মহানগর, জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন শরীক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সিলেট জেলা ও মহানগরের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর সভাপতিত্বে এবং মহানগর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জানাজা পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের একজন সাহসী সিপাহশালার। যার প্রমাণ এই ইসলামী চিন্তাবিদের গায়েবানা জানাজা শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে জানাজায় অংশ নিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। সরকার জীবনের শেষ সময়ে এসে জাতির এই অভিভাবকের প্রতি বিচারের নামে অবিচার করে নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণ করে তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর জন্য জনগণ আওয়ামীলীগকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। আল্লাহর জমীনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরো বেগবান করার মধ্য দিয়ে ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের রেখে যাওয়া কাজ সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অঙ্গিকারাবদ্ধ। প্রবাসে বসবাসরত অধ্যাপক গোলাম আযমের সন্তানদের জানাজায় আসতে বাধা দিয়ে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি নিকৃষ্টতম অধ্যায়ের সূচনা করেছে। গোলাম আযম দেশ, জাতি, ইসলাম ও গোটা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় মুসলিম বিশ্ব তাঁকে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক দায়িত্বশীল অধ্যাপক ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেঃ কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান তাপাদার, ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট মহানগর সভাপতি মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, জেলা সভাপতি মাওলানা আসলাম রহমানী, লেবার পার্টির মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, জেলা দক্ষিণ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা উত্তর সেক্রেটারী মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সিলেট মহানগর সহকারী সেক্রেটারী মো: শাহজাহান আলী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির সেক্রেটারী মাশুক আহমদ, জেলা পূর্বের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল্লাহ দস্তগীর ও জেলা পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমুখ।
অধ্যাপক ফজলূর রহমান বলেন, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম দায়িত্বশীল অভিভাবক অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি জুলুম করে তাঁকে শহীদ করা হয়েছে। তিনি দেখতে যেমন সুন্দর ছিলেন তার চেয়েও বেশী সুন্দর ছিল তাঁর আমল-আখলাক ও জ্ঞানের পরিধি। যারা তাঁর প্রতি জুলুম ও নিষ্ঠুর আচরণ করেছে আল্লাহ দুনিয়াতেই তার নমুনা দেখাবেন। আর পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।
দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর সাধ নিতে হবে। তাই আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। দেশের নাস্তিক মুরতাদরা আরাম আয়েশে দিন যাপন করে আর ইসলামী নেতৃবৃন্দের উপর জুলুম নিপীড়ন করা হয়। অধ্যাপক গোলাম আযম স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করলেও সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। তাই আমাদেরকে নাস্তিক মুরতাদদের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম প্রখর মেধা ও জ্ঞান নির্ভর একজন ভাষা সৈনিক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এদেশের ধর্মপরায়ন মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেশে কুরআনের দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই তিনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে অধ্যাপক গোলাম আযমের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
অধ্যাপক আব্দুল হান্নান তাপাদার বলেন, বিচারের নামে অবিচার করে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহশালার ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। জাতি তাঁর উপর জুলুমকারী এই সরকারকে কখনই ক্ষমা করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে দেশের মানুষ কতটা ভালোবাসে আজকে সিলেটের আলীয়া মাদরাসা ময়দানের এই গায়েবানা জানাজা একটি জীবন্ত প্রমাণ। ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপকার ক্ষণজন্মা রাজনৈতিক নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রতি আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার চরম ও নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণ করেছে। এ জন্য উপস্থিত লাখো জনতাকে সামনে নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে বিচার প্রার্থনা করলাম। তিনি আজীবন ইসলামের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। দ্বীন প্রতিষ্ঠার তাগিদেই তিনি তাবলীগ জামায়াত ও ইকামতের দ্বীনের কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। অধ্যাপক গোলাম আযম রচিত ইসলামিক বইয়ের ব্যাপক ভান্ডার সারা দুনিয়ায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিজ্ঞপ্তি