তাহিরপুরে সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
এক প্রতিবেদন দাখিলেই ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আদায়
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলা ভুমি অফিসের এক সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ভুমির মাপঝোঁক,ভুমির শ্রেণী ও দখল পজিশন সরজমিনে পরিদর্শন করে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি)’র বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে গিয়ে ভুমি অফিসে আবেদনকারীদের কাছে নানা অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন হয়রানী করিয়ে সার্ভেয়ার ক্ষেত্র বিশেষ প্রতি প্রতিবেদনে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পর্য্যন্ত উৎকোচ আদায় করেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
ভোক্তভোগীরা সার্ভেয়ারের এমন বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য , হয়রানী ও দুর্নীতি বন্ধে প্রতিকার চেয়ে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর অনধিক ৫টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা যায়, উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলাম ‘খ’ তপশীলভুক্ত যশপ্রতাপ মৌজার ১/১ নং খতিয়ানের ভুমির নামজারীর ক্ষেত্রে প্রতিবেদন দাখিল করতে গিয়ে ভুমি অফিসে বেশ ক’জন আবেদনকারীর নিকট মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করে বসেন।
উপজেলার বাদাঘাটের মৃত মজর মিয়ার পুত্র খুর্শেদ আলম তার মাত্র ১৫ শতক ভুমির প্রতিবেদন দাখিল করাতে চাইলে তার নিকট সার্ভেয়ার সাইফুল ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সার্ভেয়ার সাইফুল সাফ জানিয়ে দেন আমার কথামত টাকা না দিলে আমি পুন:রায় আপনার ভুমি খাস উল্ল্যেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করব। উপায়ন্তুর না দেখে খুর্শেদ চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অভিযোগের তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহকারি কমিশনার (ভুমি)’র নিকট প্রেরণ করা হলেও সার্ভেয়ারের আরেক সহযোগী অফিস সহকারি আজ অবধি অভিযোগ পত্র সহকারি কমিশনারের কাছে দাখিল করেনি। খুর্শেদের ন্যায় আরো ৪ ভোক্তভোগী সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করে আজো কোন প্রতিকার পাননি।
অবশ্য চাহিদা মাফিক টাকা পেলে সার্ভেয়ার সাইফুল যত জঠিল বিষয়ই হোক না কেন প্রতিবেদন সহ নামখারীজের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভুমিকা রাখছেন। উপজেলা অফিস সহ সর্বত্রই জনশ্রুতি রয়েছে যশপ্রতাপ মৌজার ‘খ’ তপশীল ভুক্ত ১৫ শতক ভুমির ০১ নামখারীজ সহ এক প্রতিবেদন দাখিলেই অবৈধ সুবিধা দিয়ে পৈলনপুর গ্রামের এক কয়লা ব্যবসায়ীর নিকট থেকে সাইফুল ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করেছেন। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাইফুল ইসলাম একই গ্রামের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের নিকট ৫০ হাজার টাকা, কামড়াবন্দের আবুল কালামের নিকট ১৫ হাজার টাকা, রফিকুল ইসলামের নিকট ২০ হাজার টাকা, ইকবাল হোসেনের নিকট ১৫ হাজার টাকা, বাদাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ টেইলারের নিকট ২০ হাজার টাকা ও ননাই গ্রামের কৃষক শামিমের নিকট ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ দাবি করেন। যশপ্রতাপ মৌজার কমপক্ষে ‘খ’ তপশীলভুক্ত ভুমির নামজারীর বিপরীতে উপজেলা ভুমি অফিসে প্রায় আড়াই শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ৪০/৪২ টি আবেদনের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সার্ভেয়ার সাইফুলকে দেয়া হয়।
সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি এ ব্যাপারে কোন প্রকার বক্তব্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন, এক পর্যায়ে তিনি অভিযোগকারী খুর্শেদ আলমকে চিনেন না বললেও কিছুক্ষণ পর পুন:রায় বললেন উৎকোচ দাবি তো দুরের কথা আজ পর্য্যন্ত আমি খুর্শেদ আলমের নিকট থেকে এক কাপ চা পর্য্যন্ত পান করিনি। পৈলনপুর গ্রামের কয়লা ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিল ও নামখারীজের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিক্তিহীন দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভুমি)’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. ইকবাল হোসেনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নামখারীজের জন্য অনেকগুলো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি বলে জানতে পেরেছি, প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরণের টাকা নেয়ার বিধান নেই। সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।