পুরোনো আদলেই এমসির সেই ছাত্রাবাসের উদ্বোধন আজ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ২০১২ সালের ৮ জুলাই। হঠাৎ করে সন্ধ্যা বেলা ছাত্রলীগ-শিবির রক্তক্ষয়ী সংষর্ষ। সংঘর্ষের জেরে পুড়িয়ে দেওয়া হলো শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসটি। পুড়া ছাত্রবাস দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আজ সেই পড়ে যাওয়া ছাত্রাবাসের নব নির্মিত ২টি ব্লক উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী। দুপুর দেড়টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করবেন বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অবশ্য ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে হারানো রূপ ফিরে পেয়েছে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসটি। পুরোনো আদলে নতুন করে তৈরী হয়েছে পুড়ে যাওয়া ছাত্রাবাসের ১ ও ২ নম্বর ব্লক। সাথে সাথে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে শ্রেণী কক্ষগুলোও। ২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যা রাতে ছাত্রলীগ-শিবির সংষর্ষে পুড়িয়ে দেওয়া হয় শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসের ধ্বংসস্তুপ দেখে কেঁদেছিলেন অনেকে। খোদ শিক্ষামন্ত্রীও আবেগ ধরে ধরে রাখতে পারেননি তখন।
এরপর পুরোনো শৈলী রেখেই ভস্মিভূত ছাত্রাবাস পুননির্মাণ ও আংশিক পুড়ে যাওয়া ব্লকগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরই ধারাবাহিকতায় ৪শ’ ৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পুড়ে যাওয়া ছাত্রাবাস পুননির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরুর তথ্য নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়- ছাত্রাবাসের ১, ২ ও ৪ নং ব্লক পূণঃনির্মাণ এবং ব্লক- ৩ ও ৫ ছাড়াও শ্রীকান্ত ব্লক, ছাত্রাবাস সুপার কোয়াটারের ৫টি ব্লক, ছাত্রাবাস সুপার কোয়ার্টার (ব্লক-শ্রীকান্ত)সহ অপর একটি ছাত্রাবাসের মেরামত ও সংস্কার কাজ করা হয়। এরই মধ্যে ৪ নং ব্লক পুননির্মাণ, অন্য ছাত্রবাসগুলোসহ ছাত্রাবাস সুপারের কার্যালয় সংস্কার সম্পন্ন করে তা কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। বাকি ছিল ১ ও ২ নং ব্লকের পুননির্মাণ কাজ এবং ছাত্রী নিবাস তৈরী।
সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন নির্মিত ছাত্রাবাসের ১ নং ব্লকে ১ শয্যা বিশিষ্ট একটি, ২ শয্যা বিশিষ্ট ২টি এবং ৩ শয্যা বিশিষ্ট ১৩ কক্ষ ছাড়াও টয়লেট ব্লক, ডাইনিং, কিচেন, ষ্টোর ও স্টাফ রুম রয়েছে। এছাড়া ২ রং ব্লকের ছাত্রবাসে ১ শয্যার একটি, ২ শয্যার একটি, এবং ৩ শয্যা বিশিষ্ট ১২টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে টয়লেট ব্লক, ডাইনিং, কিচেন, ষ্টোর ও স্টাফ রুম রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের সহকারি প্রকৌশলী অনন্ত কুমার ভৌমিক বাংলানিউজকে জানান, ২০১৩ সালে ৪শ’ ৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত ছাত্রাবাস পুনর্র্নিমাণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ছাত্রবাসের কাজ শুরু হয়।
তিনি জানান, ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল ১শ ৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ছাত্রাবাসের ১নং ব্লকের এবং একই তারিখে ১শ’ ৪৮ কোটি ৬৮ লাখ ব্যয়ে ১নং ব্লকের কাজ শুরু হয়। ১নং ব্লকের কাজ করে মেসার্স নবকিশোর দাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং ২নং ব্লকের কাজ করে এলাহি এন্টারপ্রাইজ।
এছাড়া একই বছরের ২৪ মার্চ ৪নং ব্লকের পুনর্র্নিমাণে ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ব্যয় ধরে কাজ করা হয়। এ কাজ সম্পন্ন করতে ৯ লাখ টাকা কম লেগেছে। তাছাড়া ১৯ লাখ ২৮ হাজার টাকায় ৩নং ব্লকের, ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ৫নং ব্লক, ১৯ লাখ ৩১ হাজার টাকায় শ্রীকান্ত ব্লক, ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় ধরে ছাত্রাবাস সুপার কোয়াটারের ৫টি ব্লক এবং ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে এমসির অপর আরেকটি ছাত্রবাসের শতভাগ মেরামত ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে জানান অনন্ত কুমার ভৌমিক।