উপলক্ষ ঈদ : সীমান্তে চামড়া চোরাকারবারিরা সক্রিয়
হাবিবুর রহমান তাফাদারঃ কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে চামড়া চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পাচারের সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছে চক্রটি। এ কাজে ভারতীয় চামড়া সিন্ডিকেট বিনা সুদে লগ্নি করেছে কোটি কোটি টাকা। নিয়োগ করা হচ্ছে গরু ব্যবসায়ী, কসাই ছাড়াও গ্রামেগঞ্জে শত শত দালাল। তাদের হাতে ঈদের আগেই তুলে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। একদিকে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী তথা মহাজন ও ট্যানারিগুলোতে শত শত কোটি টাকা পাওনা। অন্যদিকে ভারতীয় চামড়া সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকার বিনা সুদে অর্থ লগ্নি। এসব কারণে সংগ্রহ করা চামড়ার প্রায় ৮৫ শতাংশ বিশেষ মহলের দখলে যাওয়ায় ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চামড়ার ব্যবসায় ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে টিকতে না পেরে এরই মধ্যে অনেকেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে ব্যবসা বন্ধের কথাও ভাবছেন। বাংলাদেশে বেশিরভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির সময়। আর এ সময়ই চামড়া বাজারজাতকরণের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেডের সদস্যরা সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। ঈদের দিন থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে চোরাকারবারিরা। দেশের বাজারে চামড়ার দরপতন, গরুর উচ্চ মূল্য, চড়া সুদে ব্যাংক থেকে টাকা পেতে নানা ঝুট-ঝামেলা, চামড়া দিয়ে আড়ৎদারের কাছ থেকে টাকা তুলতে জুতা ক্ষয় অবস্থাকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সীমান্তের ওপারের চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
সিলেট সীমান্তবর্তী এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী সরাসরি এ কারবারের সঙ্গে জড়িত। এদেশীয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা অধিক মুনাফালোভী দালাল ও তাদেরই স্বগোত্রীয়। এ জেলার একটি বিশাল সীমান্তজুড়ে রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকা দিয়েই কোরবানির পর মাসব্যাপী চামড়া বাধাহীন ভাবে ভারতে চলে যায়। ঈদ সামনে রেখে এসব সিন্ডিকেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দিনদিন বাড়ছে চামড়া ব্যবসায়ী, কসাই আর দালালের ভিড়। বাজারের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই দালাল নিয়োগ করেছেন চামড়া ক্রয়ের জন্য।
সিলেট ছাড়াও ঠাকুরগাঁও ,পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের জন্য প্রস্তুত শত শত দালাল সিন্ডিকেট। চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পাচারের জন্য সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে চামড়া সংরক্ষণ আড়ৎ।
কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী, দালাল, কসাই ও চামড়া ব্যবসায়ী জানান, সিলেট সহ সারা দেশের প্রায় ৬০ ভাগ চামড়াই সীমান্ত দিয়ে চলে যাবে ওপারে। দেশীয় বাজারের চেয়ে ওপারের বাজার দর বেশি ও সুদ ছাড়া মোটা অংকের আগাম পুঁজি প্রাপ্তিই তাদের উৎসাহিত করছে চামড়া পাচারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চামড়া ব্যবসায় ধস নামবে। তাই এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, সিলেট সীমান্ত এলাকায় ভারতের রাজ্যগুলো অত্যন্ত গরিব। এসব এলাকায় কোন শিল্পাঞ্চল নেই। তারপরও আমাদের সাদা পোশাকধারী আইন শৃংখলা বাহিনী সার্বক্ষনিক সতর্কাবস্তায় থাববে। শুধু চামড়াই নয়, যে কোন ধরনের চোরাচালানে আমরা জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছি।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। ইতোমধ্যে আমরা চামড়া ব্যাবসায়ী, পুলিশ, বিজিবি সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। যে কোন মূল্যে চামড়া পাচার প্রতিহত করতে সর্বস্থরে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।