মাধবপুর লেকঃ বেগুনি শাপলা সন্ধানে
এসএমএ হাসনাত: বেগুনি শাপলা দেখেছেন? এমন প্রশ্নে চমকে উঠলাম! শহুরে মানুষদের কাছে সাদা কিংবা লাল শাপলা ছাড়া অন্য কোন রঙের শাপলাচিন্তা করতে পারেনা। রাতেই ঢাকা থেকে মাত্র ২৫০ কিঃমিঃ দূরে রওয়ানা হলাম। কাকডাকা ভোরে পথে দু’ধারে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যমন্ডিত সারি সারি চা বাগান আমাদের স্বাগতজানালো। শ্রীমঙ্গল নেমে সিএনজিযোগে রওয়ানা দিলাম। পথে পড়লো চা বোর্ড, গবেষণা কেন্দ্র, চা জাদুঘর, লাউয়াছড়া উদ্দ্যান, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা আর মুনিপুরি পাড়া। অনেকটা ঘোরের মধ্যেই এসে পৌছালাম মাধবপুর চা বাগানের গেটে। দু’ধারের চা বাগানের ছবি তুলতে তুলতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। দেরি দেখে সঙ্গীরা তাড়া দিল। লেকের পাড়ে পৌঁছে আমরা হতবাক! টলটলে পানিতে সাদা শাপলা, লাল শাপলার দেখলাম। অবশেষে দেখা মিলল বেগুনী শাপলার। একশ, দুশ, তিনশ… সহস্র! আরও জানলাম হলুদ বর্ণেরও শাপলা দেখা মিলে কোন কোন সময়।
মাঝে লেক আবার চারদিকে পাহাড়ী ঢালে সারি সারি চা বাগান। লেকের ধারে পায়ে হাটা পথ ধরে মিলবে অভাবনীয় দৃশ্য। প্রতিবছর এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তথেকে পিকনিকে আসে। পাহাড়ের চুড়ায় উঠে লেকের দৃশ্য দেখার মজায় আলাদা। মাধবপুর লেক থেকে বেরিয়ে সীমান্তঘেষা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ ও দলাইবিজিবি সীমান্ত ফাড়ী দেখে যেতে পারেন। এ স্মৃতিসৌধের কাছেই বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের শাহাদৎ বরণ করেছিলেন। পথে যেতে পরবে চা বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর বেশক’টি চা কারখানা। যদিও কারখানাগুলোতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। মাইলের পর মাইল যেদিকে তাকান শুধু পাহাড়ী চা বাগান। চা বাগানের মধ্যে স্মৃতিসৌধটি ছোট্টখাটো, কিন্তু অনন্য। পাশেই দলাই বিজিবি সীমান্ত ফাড়ী আর সিকি মাইল দূরে ভারতীয় সীমানা।
এখানে এলেই যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে বৈকি। ফিরে যাওয়ার পথে সবশেষে ঢুঁ মারতে পারেন মুনিপুরী ললিতকলা একাডেমীতে। মুনিপুরীদের সংস্কৃতি আর কৃষ্টি-কালচার সর্ম্পকে জানতে ভুলবেন না।
যেভাবে যাবেন ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে মৌলভীবাজারের গাড়ীতে শ্রীমঙ্গল বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি রিজার্ভ করে সোজা মাধবপুর লেকে যেতে পারেন। ৩৫০-৪০০ টাকা নিতে পারে। পবেশ পথে কোন এন্টি ফি নেই। শেয়ারেও যেতে পারেন। শ্রীমঙ্গল বাসস্ট্যান্ড থেকে কমলগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা যেতে ভানুগাছ বাজারে নামতে হবে। ভাড়া মাথাপিছু ৩০ টাকা। সেখান থেকে পত্রখোলা যেতে মাধবপুর বাজারে নামতে হবে। ভাড়া ১৫ টাকা। এরপর সামান্য হাটাপথে চা বাগান। তবে ভানুগাছ বাজারে নেমে দুপুরের খাবার নিতে পারেন। গ্রামের বাড়ী রেস্তোঁরা, রাঁধুনী রেস্তোঁরা, আল আকাবা রেস্তোঁরায় সস্তায় সুস্বাদু খাবার মিলে। ইচ্ছে করলে রাতে থাকতে পারেন হলিডে গেস্ট হাউজ কিংবা গ্রামের বাড়ী হোটেলে। মৌলভীবাজার শহরেও থাকতে পারেন। মাধবপুর বাজার থেকে পত্রখোলা বাজার হয়ে সীমান্তঘেষা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ ও দলাই বিজিবি সীমান্ত ফাড়ী। ভানুগাছ বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে মাধবকুন্ডু যেতে পারেন। ভাড়া পরবে ৩৫০-৪০০ টাকা।
* ফিচার লেখকঃ এসএমএ হাসনাত; বিএসএস (সম্মান), এমএসএস (গণযোগাযোগ-৮ম
বাচ), রাঃবিঃ এবং মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী। ই-মেইলঃ
[email protected], মোবাইল ফোনঃ ০১৭১০৮৭৪০০৪