১০০ আসন দিলে সরকার পতনের দায়িত্ব নেবে জামায়াত!
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ২০ দলীয় জোটে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ তারেক রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় জামায়াত বেঁকে বসতে শুরু করেছে। জামায়াত বলছে, বিএনপির সঙ্গে বড় ধরণের স্বার্থ ছাড়া তারা আর জোটে থাকতে চায় না। স্বার্থ পূরণ ছাড়া সরকার পতনের আন্দোলনেও তারা নামতে চায় না। জোট সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপি জামায়াতের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ায় সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত। তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে আগামী নির্বাচনে ১০০ আসন চেয়েছে। যদি জামায়াতকে আসনগুলো দেয়া হয় তাহলে সরকার পতনের দায়িত্ব তারা কাঁধে তুলে নেবে। এমনকি জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঢাকা অবরোধ করে সরকার পতন ঘটাতে মাত্র ছয় দিন সময় নেবে জামায়াত। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া জামায়াতের এ প্রস্তাবে হ্যা বা না কিছুই বলেন নি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা জামায়াতের এ প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ডিফেন্স টিমের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ জানান, বিএনপির সাথে এ ধরনের কোনো চুক্তির প্রশ্নই আসে না। বিএনপি-জামায়াত আলাদা একটি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক প্রয়োজনে আমরা জোটে আছি। এখানে আসন ভাগাভাগির বিনিময় আন্দোলন হবে এমন চুক্তির কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, এটা অবাস্তব কথা। এ ধরনের কর্মকা-ের সাথে দূরতম কোনো সম্পর্ক বিএনপির নেই। বিএনপির শত্রু যারা তারা এগুলো ছড়াচ্ছে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়েও বিএনপির সঙ্গে চরম টানাপোড়েন চলছে জামায়াতের সাথে। বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশি মামলা থাকায় তারা এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারছে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তা কম। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা ছিল তা জামায়াত পাচ্ছে না। বরং দেশের বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বিএনপি নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্বাসঘাতকতার কোনো প্রশ্নই আসে না। আন্দোলন চলছে। বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেই বিএনপি প্রাধান্য দিচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানায়, সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে জামায়াত। অনেক স্থানে জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী জোটগতভাবে ঘোষিত হলেও বিএনপি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা খেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করায়। ফলে কিছু স্থানে জামায়াত উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারেনি। এছাড়া জেলাগুলোতে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাদের ধরে দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা থেকে মুক্ত করছে কিন্তু জামায়াতের নেতাকর্মীদের জন্য তারা কিছুই করছে না। বরং সবক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াতের সাথে বিপরীতমুখি আচরণ করছে। একারণে বিএনপিকে মূলত প্রতারক হিসেবে নিচ্ছে জামায়াত।
জামায়াত সূত্র নিশ্চিত করেছে, সর্বশেষ বিএনপির সাথে জামায়াতের যে গোপন বৈঠক হয়েছে, তাতে খালেদা জিয়া নিজেই উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে জামায়াত সরকার পতনের দায়িত্ব কাঁধে নিতে ১০০ আসন দাবি করেছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন তাদের প্রস্তাবকে গ্রহণ করতে পারেন নি। জানা গেছে, ওই বৈঠকে জামায়াত সারাদেশে বিএনপির খুড়িয়ে চলা অবস্থার আদ্যপান্ত তুলে ধরেছে। এমনকি গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপিকেই দায়ী করা হয়েছে। জামায়াতের নেতারা বৈঠকে খালেদাকে বলেন, আপনি যদি আমাদের শর্ত মেনে নেন তাহলে আমরা আরেকটি ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে ছয় দিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাব।
সূত্র জানায়, জামায়াত এখন চরম ক্ষুব্ধ বিএনপির ওপর। বিএনপির সাথে তারা কোনো ধরনের আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না। কারণ বিএনপির কাছ থেকে তারা কখনই ভাল প্রতিশ্রুতি পায়নি। বরং সব সময় জামায়াতের সাথে গাদ্দারি করেছে বিএনপি। এজন্য বেশি আসন নিয়েই বিএনপির সাথে থাকতে চাইছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের ঢাকা মহানগরের এক নেতা জানান, বিএনপি চায় তাদেরকে হাতে ধরে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হউক। তারা রাস্তায় আন্দোলন করতে চায় না। তাই জামায়াতও দায় নিতে চায় না। এ নিয়ে বিএনপির সাথে সম্পর্কে কিছু ভাটা পড়েছে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়েও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্ক বিরাজ করছে। যশোরের কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিকে আর বিশ্বাস করছে না জামায়াত। তারা বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজো করে চলতে চায়। কারণ উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি পর্যায়ের সব ধরণের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিরামপুর উপজেলা জামায়াতের এক নেতা জানান, উপজেলা নির্বাচনে মনিরামপুরে জামায়াতের প্রার্থী ছিল জোটগতভাবে। কিন্তু বিএনপি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা খেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী দেয়। এজন্য জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেনি। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, উপজেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জামায়াতের এখন কোনো সম্পর্ক নেই। এখন থেকে বিএনপিকে কোনো নির্বাচনে সমর্থন দেবে না জামায়াত।