সুনামগঞ্জে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী : সুরমার পানি বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপরে

Sunamgonjসুরমা টাইমস ডেস্কঃ টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার ছোট-বড় সব নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে আমন ফসল ও সবজিক্ষেত।
জেলার দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দিন দিন বেড়েই চলেছে দুর্ভোগ। বন্যাকবলিত এ সব এলাকার মানুষ ত্রাণও পাচ্ছেন না। খোলা হচ্ছে না কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে বন্যার্তদের জীবনযাত্রা।
জামালগঞ্জ উপজেলার পানিবন্দী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের উজ্জ্বলপুর এলাকায় সড়ক ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই বাইপাস সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ সড়কটি ভেঙে গেলে ভীমখালী, ফেনারবাক ও সদর ইউনিয়নের আমন ফসলসহ ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার রামনগরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। দর্গাপাশা, পশ্চিম বীরগাঁওসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল কাদির সিহাব জানান, সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোর বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। দুর্ভোগে আছেন উপজেলার প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ। যত দ্রুত সম্ভব বন্যাকবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, যাদের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে তাদের স্কুল ভবনে চলে আসার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার সুরমা, ভোগলা, নরসিংহপুর ইউনিয়নের ছয় শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। দুর্গতদের জন্য ১০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে ক্রমশ বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলেও জানান তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া গবাদিপশু নিয়েও কৃষকরা বিপদে আছেন। দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ জানান, বাদাঘাট দক্ষিণ ও ফতেপুর ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। সলুকাবাদ ইউনিয়নের চলতি নদীর তীরবর্তী ডলুরা গ্রামের ৪০টি পরিবার ডলুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনও তারা কোনো ত্রাণ পায়নি।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনুর আক্তার পান্না জানান, নোয়ারাই, ইসলামপুর, দক্ষিণ ক্ষুরমা ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এ তিনটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। মধ্যনগর থানার দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা বাজারে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে কিছুটা পানি কমলেও এখন আবার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্রিয় থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বলা হয়েছে।’ তিনি জানান, এখনও আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।