নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কোয়ার্টার থেকে তরুনীর ওড়না পেছানো লাশ উদ্ধার
হত্যা না আত্মহত্যা এনিয়ে তোলপাড় : অভিযুক্ত সজলকে গ্রেপ্তারের জন্য শহরে মিছিল
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকেঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রজনী গন্ধা কোয়াটারে প্রধান অফিস সহকারী সজল চন্দ্র দেব’র বাসা থেকে গতকাল শনিবার সকালে অঞ্জনা রানী নম (১৬) নামের এক গৃহপরিচালিকার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গৃহকর্তা সজল দেব এ ঘটনাকে গলায় ফাসঁ লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী করেছেন। পুলিশ ওই বাসার ড্রইং রোমের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করার সময় নিহতের গ্রামবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসেন। সাথে সাথে গ্রামবাসী থানায় জড়ো হয়ে গৃহর্কতা সজল দেবকে গ্রেফতারের দাবী জানান। পুলিশ এ দাবী না মানায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রামবাসী। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের টিএইচও ডাঃ অর্ধেন্দু দেব,থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ লিয়াকত আলী,আরএমও ডাঃ আব্দুস সামাদসহ একদল সংবাদকর্মীরা হাসাপাতাল কোয়াটারের ওই বাসায় ছুটে যান। নিহতের নাকে,মূখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল। দেখতে অন্তত ২/৩ মাসের গর্ভবতী বলে ধারনা করা যাচ্ছে।
ঘটনা সুত্রে জানাযায়,উপজেলার সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রামের রাবেন্দ্র নম’র কন্যা অঞ্জনা রানী নমকে প্রায় ৮ বছর বয়সে তার পিতা-মাতার কাছ থেকে নিয়ে আসেন সজল দেব। কথা থাকে তাকে লেখা পড়া করিয়ে বিয়ে দিবেন এবং পিতার ¯েœহে লালন পালন করবেন। সেই মোতাবেক অঞ্জনা নমকে নবীগঞ্জ আদর্শ প্রাইমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। ৫ম শ্রেণী পাশ করতে না পারায় আর লেখা পড়া এগোয়নি। প্রায় ৮ বছর ধরে সজল চন্দ্র দেব’র বাসায় পরিবারের একজন হিসেবেই থাকতো। বিনাপারিশ্রমিকে বাসার কাজকর্ম করতো। গত শুক্রবার সকালে হাসপাতালের প্রধান সহকারী সজল দেব স্বপরিবারে গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই করাব গ্রামে ভাতিজির বিয়ের অনুষ্টানে চলে যান। বাসায় একাই থাকে অঞ্জনা নম। ভিতরে অঞ্জনাকে রেখে বাহিরে তালা ঝুলিয়ে চাবি পাশের রোমের ডাঃ বিথী বনিকের বাসায় রেখে চলে গিয়েছিলেন। শনিবার সকালে বিয়ের অনুষ্টান শেষে সজল দেব স্বপরিবারে বাসায় ফিরে দরঝা খোলেই দেখেন ড্রইং রোমে বিদ্যুতিক ফ্যানের সাথে পড়নের ওড়না দিয়ে গলায় ফাসঁ লাগিয়ে ঝুলন্ত অঞ্জনা রানী নম’র নিথড় দেহ। সাথে সাথে ওড়না কেটে মেঝেতে রাখেন সজল দেব। খবর দেয়া হয় হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। কর্তৃপক্ষ থানায় ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌছে মৃতের সুরত হাল রির্পোট তৈরী শেষে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করেন। এদিকে কিশোরী অঞ্জনা রানী নম’র আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কোয়াটার এলাকায় নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। কিশোরী ষোড়শী অঞ্জনা রানী নম আসলেই কি আত্মহত্যা করেছেন, নাকি কৌশলে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হচ্ছে এ নিয়েও কানাঘোষা চলছে। নির্ভর যোগ্য একটি সুত্রে জানাযায়,প্রায় সময়ই বাসার গৃহকর্তী অঞ্জনা রানী নমকে সন্দেহের ভষিভুত হয়ে জ্বালা যন্ত্রনা দিতেন। বেশীর ভাগ সময়ই সজল দেবকে নিয়ে সন্দেহ করতেন গৃহকর্তী। এমন কথা শুনা যাচ্ছে নানা সুত্র থেকে। হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী সজল চন্দ্র দেব একাধিক বিয়ে করে ও নানা অপকর্মে জড়িত বলে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সমালোচনা চলে আসছিল। এ ব্যাপারে সজল দেব জানান,সে আমার মেয়ের মতো। তাকে আমার বাসায় আনার পর থেকে মেয়ের আদরেই লালন পালন করে আসছি। সে আমাকে বাবা ও আমার স্ত্রীকে মা’বলেই ডাকতো। অঞ্জনা এমন ঘটনা কেনো ঘটনালো তা ভাবতে পারিনি। কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরি কল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অর্ধেন্দু দেব’র সাথে। তিনি জানান,হাসপাতালে আসার পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা জানতে পারি। সাথে সাথে পুলিশে খবর দেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে গর্ভবতী। তবে ময়না তদন্তের পরে আসল ঘটনা জানাযাবে। এ ব্যাপারে প্রতিবেশী বাসার বাসিন্দা একই হাসপাতালের মেডিকেল এ্যাসিষ্টেন্ড বিথী রানী বনিক বলেন,শুক্রবার সকালে বৌদি আমার বাসায় চাবি রেখে অঞ্জনাকে ঘরের ভিতরে তালাবদ্ধ রেখে গ্রামের বাড়ি যান। শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় বৌদি আমার কাছ থেকে চাবি নেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,দাদা ( সজল দেব) যেখানেই যেতেন প্রায় সময়ই অঞ্জনাকে সাথে নিতেন। তাকে মেয়ের মতো আদর করতেন। থানার অফিসার ইর্নচাজ মোঃ লিয়াকত আলী বলেন,প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়না তদন্ত রির্পোট আসার পরই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। এদিকে আলোচিত ঘটনার খবর পেয়ে দত্তগ্রামের শতাধিক লোকজন হাসপাতালে ছুটে যান। তারা পূণরায় লাশের সুরতহালসহ গহর্র্কতা সজল দেবকে গ্রেফতারের দাবী জানান। জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে পুলিশ হাসপাতাল থেকে সজল দেবসহ মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসলে বিক্ষোদ্ধ লোকজন থানায় জড়ো হয়ে অঞ্জনা নম আত্মহত্যা করেনি,তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করে গহর্কতা সজল দেবকে গ্রেফতারের দাবী জানান। পুলিশ সজল দেবকে আটক না করায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রামবাসী।
সজলকে গ্রেফতারের দাবীতে নবীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি: গতকাল শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের রজনী গন্ধা কোয়াটারে অবস্থানরত প্রধান অফিস সহকারী সজল চন্দ্র দেব’র বাসভবন থেকে কিশোরী অঞ্জনা রানী নম’র মৃতদেহ উদ্ধার করার ঘটনাকে হত্যাকান্ড বলে দাবী করেছেন নিহতের গ্রামবাসী। খবরে পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুটে গিয়ে পুণরায় সুরতহাল তৈরীসহ গৃহর্কতা সজল দেবকে গ্রেফতার করার দাবী জানান। পুলিশ এক পর্যায়ে লাশসহ সজল দেবকে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় এসে পুণরায় সুরতহাল তৈরী করে লাশ হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এদিকে গ্রামবাসী থানায় জড়ো হয়ে হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী সজল দেবকে গ্রেফতার করার জন্য দাবী জানান। থানা থেকে সজল দেব বের হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল হাসপাতাল কোয়াটারের প্রধান গেইটের সামনে অবস্থান নেয়। এবং বিক্ষোদ্ধরা বিক্ষোভ মিছিল করে সজলকে গ্রেফতারের দাবী জানান। এ সময় বক্তব্য রাখেন বাসদ নেতা চৌধুরী ফয়সল শোয়েব,উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হারুনুর রশীদ হারুন,শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমদ ঠাকুর রানা,কৃষক পাটির নেতা এমএ খালেন,পিন্টু পুরকায়স্থ,কলেজ ছাত্রদল সভাপতি অলিউর রহমান। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন,নিরীহ গরীর কিশোরী মেয়ে অঞ্জনা রানী নম কে হত্যা করে সজল দেব আত্মহত্যা বলে প্রচার করে বাচার অপচেষ্টা করছে। তারা বলেন পুলিশ প্রশাসন ঘাতককে গ্রেফতার এবং তার বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে তাকে জামাই আদরে থানা থেকে বের হতে দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা উক্ত ঘাতককে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার না করলে তারা আইন নিজের হাতে তোলে নেয়ারও হুমকী দেন।