বালাগঞ্জে বিএনপিতে দ্বিধা-বিভক্তি : তৃণমূল নেতাকর্মিরা ক্ষুদ্ধ হতাশ
এসএম হেলাল, বালাগঞ্জঃ বালাগঞ্জ বিএনপিতে চরম বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিএনপির সাথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে সহযোগেী সংগঠনগুলোও। এ নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মিদের মধ্যে তিব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ঈদের পর কেন্দ্র ঘোষিত সরকার বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালনে বালাগঞ্জ বিএনপি কতটুকু অবদান রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান ত্যাগী নেতাকর্মিরা। দলের দ্বিধা-বিভক্তির ব্যাপারে নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদী লুনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
জানা গেছে, এম. ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ ঘটনার পর থেকেই বালাগঞ্জ বিএনপিতে নানা মতভেদ দেখা দেয়। এরপরও দীর্ঘ ২/৩ বছর বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যক্রমে বিষয়টি তেমন প্রভাব না পড়লেও সম্প্রতি উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠনের পর দলীয় কোন্দল প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। গঠিত আহবায়ক কমিটিতে বিশেষ করে আহবায়ক ও সিনিয়র সদস্যের যৌথ পরামর্শে কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা থাকলেও তা কোন ভাবেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আহবায়ক কমিটির একাধিক সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সিনিয়র সদস্য কামরুল হুদা জায়গীরদারের কোন মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে গত বুধবার বালাগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের আয়োজন নিয়ে দলীয় কোন্দলের প্রকাশ্য রুপ দেখা গেছে। ওইদিন উপজেলা সদরে এমএ খাঁন অডিটুরিয়ামে উপজেলা বিএনপির ব্যানারে ইফতার আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়া হলেও জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল উপজেলা শাখা মাত্র ১শ গজ দূরত্বে একটি কমিউনিটি সেন্টারে পৃথক আরেকটি ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শুধু তাই নয় একই দিন পাশ্ববর্তী বোয়ালজুড় ইউনিয়ন বিএনপির আরেকটি পূর্ব নির্ধারিত ইফতার মাহফিল থাকায় বিএনপি ও শ্রমিকদলের পাল্টাপাল্টি পৃথক ৩টি ইফতার মাহফিল আয়োজনের কারণে দলের নেতাকর্মিদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। উপজেলা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়াকে নিয়ে বিএনপি ইফতার আয়োজন করলেও সাবেক সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার তার সাবেক কমিটির সক্রিয় ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির অধিকাংশ নেতাদের নিয়ে বোয়ালজুড়ে ইফতার মাহফিল করেন। এসব পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিনিয়র তিব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা জানান, বিগত উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত দলের ত্যাগী নেতাকর্মিরা যেভাবে মাঠে একযোগে কাজ করেছে সেই অবস্থা আর নেই। কথিপয় সুবিধাবাদী নেতাদের ইন্ধনে বিএনপির ঘাটি বালাগঞ্জে দলের দূরবস্থা বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শাখার সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার পর যারা আন্দোলন সংগ্রামে শরিক না হয়ে ঘরে বসেছিল বা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলো তারাই বিএনপিতে দ্বন্ধ সৃষ্টি করছে। সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের মতামত না নিয়েই কর্মসূচি নির্ধারণ করা হচ্ছে। যার দরুণ ১শ গজ দূরত্বে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে শ্রমিকদল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সিনিয়র বিএনপি নেতারা পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতাকর্মিরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মনোবল ভেঙ্গে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ভাটা পড়বে।
তিনি বলেন, এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ঘটনার পর কঠিন সময়ে কামরুল হুদা জায়গীরদারের নেতৃত্বে বিএনপিসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছেন। অথচ জেলা কমিটির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে কামরুল হুদা জায়গীরদারের পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
বিএনপির পাল্টা ইফতার মাহফিল আয়োজনের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল বালাগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক সিরমান আহমদ বলেন, বিএনপিতে এখন সুবিধাবাদীরা ভর করেছে। ত্যাগী নেতাকর্মিদের মুল্যায়ন করা হচ্ছে। এতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমুহেও বিভেদ বাড়ছে।