কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, বাষ্টার্ড যা করবি কর- পুলিশের এএসপিকে শামীম ওসমান
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে উপনির্বাচন চলাকালীন সময়ে এভাবেই নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত সাংসদ শামিম ওসমান হুমকি প্রদর্শন করেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত পুলিশ অফিসার এএসপি বশির উদ্দিন কে। তিনি একটি কেন্দ্র ক্লিয়ার করে দিতে বলেন এএসপি বশির কে, বশির এ কাজ করতে অপারগতা জানালে তিনি এভাবেই হুমকি দেন এই অফিসারকে।
এ ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন তিনি। সাংবাদিকদের কাছে এএসপি বশিরউদ্দিন যখন এ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন কেন্দ্রের বাইরে থেকে শামীম ওসমানের ক্যাডাররা ইশারায় ‘ভাল হবে না’ হুমকি দিচ্ছিলেন। এসব দৃশ্য দেখা গেছে টেলিভিশনের সচিত্র সংবাদে। শামীম ওসমানের হুমকির বিষয়ে এএসপি বশির উদ্দিন বলেন, মদনপুর ও ধামকুর ইউনিয়নের নিরাপত্তা ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম আমি। দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে মদনপুর ইউনিয়নের কেওঢালা কেন্দ্রে যাই। সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশ ইনচার্জ আমাকে জানান, স্থানীয় সালাম চেয়ারম্যান (মদনপুর ইউনিয়ন) এসে বলেছেন, পুলিশের কেউ এখান থেকে মাথা নিয়ে যেতে পারবে না। যদি আমাকে এখানে কাজ করতে দেয়া না হয় তাহলে আনসার, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ বেঁচে থাকবে না এবং একটাও এখান থেকে যেতে পারবে না। এখানে আমার মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। আমি একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়েছি চেয়ারম্যানকে নিয়ে আসার জন্য, যে তার সঙ্গে আমি কথা বলবো। কিন্তু চেয়ারম্যান আসেননি। তারপর চেয়ারম্যান আরেকজনের ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি ভোট দিয়েছেন কিনা। তিনি বললেন যে, হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন। তারপর আমি বললাম, আপনি আজকের দিনের জন্য শুধু একজন ভোটার, এর বেশি কিছু নন। আপনি ভোট দিয়ে চলে যান। আপনাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না, আপনিও কাউকে ভোট দিতে ডিস্টার্ব করবেন না। এ কথা বলার পর তিনি বলেন- আপনি কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন? আমি বললাম- আমি তো থ্রেট দিচ্ছি না। থ্রেট তো আপনি দিলেন। তখন উনি বললেন, আপনি কে? আপনার পরিচয় কি? আপনি থাকেন আমি আপনাকে দেখাচ্ছি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনা আমি আমার পুলিশ সুপারকে জানাই। পুলিশ সুপার নির্দেশ দিলেন, তাকে (সালাম চেয়ারম্যান) অ্যারেস্ট করো। আমি ফোর্স পাঠাচ্ছি। তুমি দ্রুত তাকে গ্রেপ্তারের আওতায় নিয়ে আসো। সঙ্গে সঙ্গে আমি র্যাবকে, বিজিবিকে কল করলাম। তারাও পৌঁছলো। আমার ফোর্সের সংখ্যাও বাড়লো। আমি যখন তার বাড়ির আশপাশে রেড দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন শামীম ওসমান আমাকে ফোন দিলেন। তিনি আমাকে বললেন- আমি সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলছি। আমি বললাম আপনি কেমন আছেন? উনি বললেন- তুমি আমার চেয়ারম্যানকে অ্যারেস্ট করার প্রিপারেশন নিচ্ছো কেন? তখন আমি বললাম, আপনার চেয়ারম্যান কেন্দ্র দখল করতে এলে আমি তাকে গ্রেপ্তার করবো না? তখন তিনি আমাকে বললেন, প্লিজ, আমি শামীম ওসমান বলছি। আমি কাউকে প্লিজ বলি না। প্লিজ, আমি বলছি- তুমি কেন্দ্রটা ছেড়ে দাও। তুমি তোমার মতো চলে যাও। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বিকাল ৪টার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ভোট দিতে হবে। তুমি কেন্দ্রটি ছেড়ে দিয়ে চলে যাও। আমি তখন বললাম- আমি পারবো না। এখন আমার চাকরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আমি এখানে প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে এসেছি। এসময় সাংবাদিক এএসপিকে প্রশ্ন করেন- উনি (শামীম ওসমান) কি আপনাকে স্যরি বলেছেন। উত্তরে এএসপি বলেন, উনি কোন স্যরি বলেননি। এর কিছু সময় পর আবার আমাকে ফোন দিলেন। আমাকে ফোনে রেখে তিনি প্রধানমন্ত্রীর এপিএস মালেক সাহেবের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি আমাকে শুনিয়ে বলছিলেন, ‘আমি শামীম বলছি, মালেক তুমি প্রধানমন্ত্রীকে বলো আমি কি রাজনীতি করবো, নাকি করবো না।’ আমি বললাম আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন- এটা আমার দেখার বিষয় না। আমি একজন ছোট অফিসার। আমি এখানে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। আমার দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে দিন। এ কথা বলার পর শামীম ওসমান আমাকে গালি দিয়ে বলেন, কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, বাস্টার্ড তুই কি করবি কর, তোকে আমি দেখে নেবো। এএসপি বলেন, আমি বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন অফিসারকে জানিয়েছি। উনি যখন ফোনে কথা বলছিল- র্যাবের মেজর সোহেল সাহেব এখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি লাউড স্পিকারে শুনিয়েছি। আমার বডিগার্ড, আমার ড্রাইভারও শুনেছে। এই ঘটনায় আমি শঙ্কিত। উনি আমাকে থ্রেট দিয়েছেন। উনি কেন্দ্রের ক্লিয়ারেন্স চাইছেন।