যাবৎ জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীর সাথে বিয়ে
স্ত্রীর মর্যাদা পেল নির্যাতিতা শাহিনা – সন্তান পেল পিতার স্বীকৃতি
কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ আইনি যুদ্ধে জয়ী হয়ে অবশেষে কানাইঘাটে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্যাতিত কন্যা স্ত্রীর মর্যাদা ও তার ঔরসজাত সন্তানের স্বীকৃতি পেলেন। জানা যায়, কানাইঘাট সদর ইউপির কচুপাড়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানের মেয়ে সে সময়কার দশম শ্রেণির ছাত্রী শাহিনা আক্তার (রামিম) এর প্রেমে প্রত্যাখান হয়ে ২/৪/২০০৮ইং তারিখে একই গ্রামের গণি মিয়ার পুত্র খছরুজ্জামান বকুল অপহরণ করে শাহিনা আক্তারকে তুলে নিয়ে একটি নির্জন জায়গায় আটকে রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পর পর ৩বার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গ্রাম্য সামাজিক সালিশে শাহিনা আক্তারকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে খছরুজ্জামান বকুলকে ধর্মীয় শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলে সে ও তার পরিবার সামাজিক সালিশ প্রত্যাখান করে। পরে নির্যাতিতা অন্তঃসত্তা শাহিনা আক্তার বাদী হয়ে খছরুজ্জামান বকুলের বিরুদ্ধে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নং- ৩৮/ ২০০৮ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত খছরুজ্জামান বকুল পালিয়ে দুবাইতে চলে যায়। বিজ্ঞ আদালত আসামীর অনুপস্থিতে ২৬/০৯/২০১২ইং তারিখে এক রায়ের আদেশে আসামী খছরুজ্জামান বকুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত, ০৩) এর ৭ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্থ ক্রমে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ১বছরের সশ্রম কারাদন্ড ভোগের আদেশ প্রদান করেন। এছাড়া আসামী খছরুজ্জামান বকুলকে উক্ত আইনের ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্থক্রমে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ২লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগের আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। সম্প্রতি যাবৎ জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী খছরুজ্জামান বকুল বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে নির্যাতিতা শাহিনা আক্তারকে ধর্মীয় শরিয়ত মোতাবেক সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে স্ত্রীর মর্যাদা ও তার ঔরসজাত শিশু কন্যা হাবিবা আক্তারকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে নিজ ঘরে তুলে নেয়। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে এ নিয়ে নানা কানাঘোষা চলছে। তাদের অভিযোগ যদিও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্যাতিতা শাহিনা আক্তার ও তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে সু-বিচার পেলেও বিয়ের দেনমোহর মাত্র সাড়ে ৩লক্ষ টাকা ধার্য্যরে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেকেই জানান, আসামী খছরুজ্জামানের যাবৎজীবন সাঁজার রায় হওয়ায় সে নিজেকে বাঁচাতে শাহিনা আক্তারকে বিয়ে করেছে। আমাদের মনে হয় শাহিনা ও শিশু সন্তানকে ঠকিয়ে খছরুজ্জামান বকুল আবার বিদেশে চলে যেতে পারে। আবার অনেকে বলেছেন, যাবৎ জীবন সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী হয়ে খছরুজ্জামান বকুল কী করে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন? বিয়ের মাধ্যমে তার সাঁজা কি মওকুফ হয়ে যাবে?