ভোট গণনা আজ , ভারতজুড়ে উত্তেজনা
সুরমা টাইমস ইন্টারন্যাশনালঃ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল আজ শুক্রবার প্রকাশ করা হবে। লাখো কণ্ঠের প্রশ্ন, ১২৮ বছরের জাতীয় কংগ্রেস নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করবে? কংগ্রেসের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে কি? সত্যিই নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন? ভারতে কি মোদিকে নিয়ে সূচিত হবে নতুন এক ইতিহাস?
২০০২ সালের গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্ত যার হাতে, তিনিই কি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের হাল ধরবেন? বিভিন্ন প্রশ্নে জেরবার পুরো দেশ।
গত ৭ এপ্রিল থেকে ৯ দফায় ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, শেষ হয় ১২ মে। সে নির্বাচনের ফল ঘোষণা কাল। ২৯টি রাজ্য আর ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮০ কোটি ভোটার এবার নির্বাচিত করবেন তাদের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বুথ-ফেরত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইঙ্গিত। এতে দারুণ খুশি বিজেপি। কংগ্রেস এখনো মেনে নিতে পারেনি সমীক্ষা রিপোর্টকে। তাদের কথা, সমীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি আসনে তারা জিততে চলেছে। ২০০৯ সালে তো একই ঘটনা ঘটেছিল? তবে সমীক্ষার চেয়ে আসন বাড়লেও কংগ্রেস যে এবার আর ক্ষমতায় যেতে পারছে না, তা অবশ্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে মেনেও নিয়েছেন। তবুও তাদের অপেক্ষা, যদি কোনো অঘটন ঘটে?
মূলত, নবম দফার নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ শুরু করে। তাতে সব গণমাধ্যমের একবাক্যের ইঙ্গিত, জিতছে বিজেপি, হারছে কংগ্রেস।
কী ইঙ্গিত দিয়েছে এসব গণমাধ্যম, একবার দেখে নেয়া যাক। সিএনএন-আইবিএন বলেছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পাবে ২৭০-২৮২ আসন। আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপি বা সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা পাবে ৯২-১০২ আসন। এনডিটিভি বলেছে, এনডিএ পাবে ২৭৯ আর ইউপিএ পাবে ১০৩টি আসন। টাইমস নাউ বলেছে, এনডিএ পাবে ২৪৯ আর ইউপিএ পাবে ১৪৮। ইন্ডিয়া টিভির হিসাবে বলা হয়েছে, এনডিএ পাবে ২৮৯ এবং ইউপিএ পাবে ১০১ আসন। এবিপি নিউজ বলেছে, এনডিএ ২৮১ আর ইউপিএ ৯৭টি আসন পাওয়ার কথা। আজতক ইঙ্গিত দিয়েছে, এনডিএ পেতে পারে ২৭২-২৮৩ আর ইউপিএ পেতে পারে ১১০-১২০টি আসন।
২০০৯ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ইউপিএ পেয়েছিল ২৬২ আসন। এর মধ্যে কংগ্রেস একা পেয়েছিল ২০৬ আসন। আর এনডিএ জোটের ১৫৯ আসনের মধ্যে বিজেপির একার থলিতে ছিল ১১৬ আসন।
গতবারের মতো এবারও কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে মানছে না কংগ্রেস। শুধু কংগ্রেস কেন, তৃণমূল কংগ্রেস, বামদল থেকে সমাজবাদী পার্টি, সংযুক্ত জনতা দল থেকে সব বিরোধী দলই একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করেছে বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংয়ের প্রশ্ন, ‘৮০ কোটির মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ ভোটারের মতামত নিয়ে সমীক্ষা করলে কি প্রকৃত ফলাফলের ইঙ্গিত মেলে?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ বলেছেন, ’বুথ-ফেরত সমীক্ষা দেখে বিজেপির উৎসব করা কি মানায়? ২০০৯ সালে এই সমীক্ষা দেখে বিজেপি উত্সব করেছিল। কিন্তু ফল কী হয়েছিল?’
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, ‘বুথ-ফেরত সমীক্ষার চেয়ে অনেক ভালো ফল করবে তৃণমূল।’
বামফ্রন্টও বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে আমল না দিয়ে বলেছে, বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফলের চেয়ে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ভালো ফলাফল করবে।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘শুধু সময় কাটাতে বলা হচ্ছে এসব কথা।’
১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০০৯ এই চারবারে বুথ-ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে নির্বাচনের ফল মেলেনি। এবারো তাই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে তাকিয়ে আছেন কালকের ফলাফলের দিকে।
তাদের ধারণা, এবারো মিলবে না বুথ-ফেরত সমীক্ষার আগাম ফলাফলের ইঙ্গিত। সবার দৃষ্টি তাই কালকের দিনেটিতে, ভোটের ফলাফলের দিকে।