দক্ষিণ সুরমায় ভাসুরপুত্রের হাত ধরে দু’সন্তানের জননীর পলায়ন!
সুরম টাইমস রিপোর্টঃ জগৎ-সংসারে পরকীয়ার টান কতোটা দুর্বার, তা আবারও প্রমাণ করলেন দুই সন্তানের জননী শাহানা আক্তার মলি (৩৩)। স্বামী-সন্তানের মায়া উপেক্ষা করে ভাসুরপুত্রের হাত ধরে বাকি জীবন পাড়ি দিতে পিছপা হবেন না- এমন অভিযোগ নিজ মেয়ে ছালেহা বেগমের। ঘটনাস্থল দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই উম্মরকবুল গ্রামে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের, মুখরোচক গল্প মানুষের মুখে।
প্রায় ১৭ বছর আগে দক্ষিণ সুরমার লাউয়াইস্থ উম্মর কবুল গ্রামের মৃত আবদুল খালিকের ছেলে মো. চাঁদ মিয়ার সাথে একই উপজেলার বগতিপুর গ্রামের ছমরু মিয়ার মেয়ে মোছা. শাহানা আক্তার মলির শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। ১৫ বছর ধরে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেরই ছিল। ইতোমধ্যে তাদের কুলজুড়ে আসে ছালেহা বেগম ও সায়েম আহমদ নামক দুই সন্তান। কিন্তু গত প্রায় ২ বছর থেকে তাদের জীবনে নেমে আসে বিষাধের ছায়া। শাহানা আক্তার মলি জড়িয়ে পড়েন ভাসুরপুত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শরীফ উদ্দিনের (৩২) প্রেমে। শরীফ উদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ে করে ঘরসংসার করছেন এবং সেখানে তার ২ সন্তানও রয়েছে।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে শাহানা ও শরীফের সম্পর্ক গভীরতর হতে থাকে। স্বামী চাঁদ মিয়া স্ত্রীকে অনেক বুঝানোর পরও শাহানার ভ্রুক্ষেপ ঘটেনি। এদিকে, শাহানার টানে শরীফ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু দিন পর পরই দেশে চলে আসেন। এ নিয়ে পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় মুখরোচক গল্পের।
অবশেষে আসে চাঁদ মিয়ার জীবনের সেই কালো দিন। গত ৪ মে রোববার মলি স্বামী-সন্তানদের মায়া ত্যাগ করে শাহানা আক্তার মলি ভাসুরপুত্র শরীফের হাত ধরে গোপনে পালিয়ে যান। স্বামী ও আত্মীয়স্বজনরা হন্য হয়ে খুঁজে না পেয়ে শেষে ৭ মে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি জিডি করেন। (জিডি নং- ২৮২)।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মে বিকালে আনুমানিক সাড়ে ৪টার সময় শাহানা ছেলেমেয়েকে বাড়িতে রেখে তার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে স্বামী চাঁদ মিয়াকে না জানিয়ে চলে যান। তখন চাঁদ মিয়া ব্যবসার কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন। পরবর্তীতে চাঁদ মিয়া রাতে বাসায় এসে ছেলেমেয়েকে মলির কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, ‘মা নানা বাড়ি গেছেন’। এসময় চাঁদ মিয়া শশুড়বাড়ির লোকজনদের কাছে ফোন করে স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা মলি সেখানে পৌঁছাননি বলে জানান। এছাড়াও চাঁদ মিয়া তাদের সকল আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি খুঁজাখুঁজি করে মলির সন্ধান না পাওয়াতে দক্ষিণ সুরমা থানায় জিডি করেন।
এদিকে, জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশও তৎপর হয় মলিকে খুঁজতে। জিডিতে উল্লেখিত মলির ব্যবহৃত একটি মোবাইল নাম্বার তদন্ত করে পুলিশ মলির সাথে যোগাযোগ করে। পরে ১০ মে দক্ষিণসুরমা থানা পুলিশ কৌশলে মলিকে থানায় নিয়ে আসে। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুহেল জানান, থানায় জিজ্ঞাসাবাদকালে মলি বলেন, ‘স্বামী চাঁদ মিয়া কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।’ পরে পুলিশ মলির বাবা ছমরু মিয়াকে ডেকে এনে মলিকে সমঝে দেন। এসময় ইউপি মেম্বার আতাউর রহমান ও মুরুব্বি সেলিম আহমদ, ইমাম মিয়া ও গেদা মিয়াসহ এলাকার বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে মলি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
স্বামী চাঁদ মিয়ার বক্তব্য :
এ বিষয়ে জানতে গেলে শাহানা আক্তার মলির স্বামী চাঁদ মিয়া চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলেন, আমার এতো দিনের গোছানো সংসার এক নিমেষেই কালবৈশাখিতে তছনছ হয়ে গেলো। চাঁদ মিয়া জানান, ‘মলি এমন কাজ করায় আমাকে লোকসমাজে হেয় হয়ে চলতে হচ্ছে। অবুঝ দুটি সন্তানও কেমন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারত্মক ব্যাঘাত ঘটেছে।’ পৃথিবীতে ‘তার মতো কোনো চাঁদ মিয়া’র যাতে জন্ম না হয় এমন অভিব্যক্তি ফুটে উঠে তার বক্তব্যে।
মেয়ে ছালেহা বেগম যা বললেন :
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ১৪ বছরের মাদ্রাসা ছাত্রী ছালেহার মুখে কথা ফুটেনি। লজ্জা ও অপমানবোধে নিরবে তখন ছালেহার গন্ডদেশ বেয়ে অশ্র“ ঝরছিলো অঝোর ধারায়। ফুপিয়ে ফুপিয়ে ছালেহা এ সময় যা বললো তার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে- ‘আমরা ২ ভাই বোন মাদ্রাসায় যেতে পারি না। ক্লাসমেটরা আমাদের মা অসৎ বলে আমাদের বিদ্রুপ করে। আমরা আমাদের মা’র স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’