“দিদি আপনার রাজ্যে ধর্ষণ কেন, আপনিতো বাঘিনী”
সুরমা টাইমস ইন্টারন্যাশনালঃ পরপর তিনটি সভায় আগাগোড়া সম্বোধন করে গেলেন ‘দিদি’ বলে। মুখে স্মিত হাসি ধরে রেখে বলে গেলেন, “দিদিকে আমি খুবই সম্মান করি।” কিন্তু হাসতেই হাসতেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর তরফে তীব্র আক্রমণ এল ‘দিদি’র জন্য!
সারদা বা টেট-কেলেঙ্কারি নিয়ে আক্রমণ ছিল গত কয়েকটি সভাতেই। ভোট-মরসুমে তাঁর শেষ বাংলা সফরে নরেন্দ্র মোদির মুখে সেই সব প্রসঙ্গই থাকল। কিন্তু কটাক্ষের পারদ চড়ল কয়েক গুণ। সঙ্গে যোগ হল রাজ্যে নারী নিগ্রহের বিষয়টি এবং অনুপ্রবেশকারী সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে তাঁর কোমরে দড়ি পরানোর যে কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী, তার উত্তরে চোখা চোখা বাক্য।
কৃষ্ণনগর এবং বারাসতের সমাবেশে মোদি সরব হন মূলত নারী নিগ্রহ নিয়ে। বলেন, “মা-বেটিদের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের কাজ। এখানে দিদির রাজত্ব। দিল্লিতে মা-বেটার রাজত্ব। মেয়েদের উপরে অত্যাচার কেন হচ্ছে দিদি? আপনি তো বাঘিনী! আপনার পশ্চিমবঙ্গে কেন ধর্ষণ হচ্ছে?” প্রশ্ন তোলেন, “দিদি, আপনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আপনার মমতা কোথায়? সব সহ্য করছেন?”
আর সন্ধ্যায় কাঁকুড়গাছির জনসভায় আগাগোড়া স্মিত হাসিমুখে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলেন, “কেন কষ্ট করে কোমরে দড়ি বেঁধে আমাকে জেলে ঢোকাবেন? একশো টাকার দড়ি কিনতে দশ হাজার টাকার টেন্ডার ডাকতে হবে! সারদা টেন্ডার ভরবে। গুণমান ভাল নয় বলে সেই টেন্ডার বাতিল হবে! আবার নতুন টেন্ডার হবে ১০ হাজার টাকার। এতে বাংলার মানুষের উপরে বোঝা বাড়বে। তার চেয়ে আমাকে বলবেন, আমি নিজে এসে জেলে ঢুকে যাব!’’ এই বলেই সামনে দু’হাত বাড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে মোদির চ্যালেঞ্জ, “আজ অতিথি হয়ে এসেছি। এখান থেকেই ধরুন না! জেলে গেলে বাংলা শিখব। এত মিষ্টি ভাষা। আমার তো কপাল খুলে যাবে!”
রাজ্যে একের পর এক কেলেঙ্কারির খোঁচা দিয়ে ‘দিদি’র সরকারকে ‘স্ক্যাম সরকার’ বলেও এ দিন অভিহিত করেন মোদি। সঙ্গে আরও এক প্রস্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “সারদা চিটফান্ডের কথা বলতেই দিদির এমন কারেন্ট লাগল! চিটফান্ডের লোকেদের গায়ে লাগবে, বোঝা যায়। কিন্তু দিদির রাগ হচ্ছে কেন? সাহস থাকলে অপরাধীদের জেলে ভরে দিন না!”
মোদীর এমন সব মন্তব্য স্বভাবতই পছন্দ হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর। মোদি যখন কাঁকুড়গাছির সভায় ভোটের আগে বাংলা থেকে শেষ বারের জন্য বিদায় চাইছেন, প্রায় একই সময়ে বেহালার সভা থেকে মমতার প্রতিক্রিয়া, “তোমার ঔদ্ধত্য ভেঙে দেব! বাংলার মাটিতে প্রচার করতে দিচ্ছি, এটা আমাদের সৌজন্য।
চাইলে এক সেকেন্ডে রুখে দিতাম। বিমান থেকে নামতে দিতাম না! কিন্তু এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়, তাই করিনি।” এ দিন চার জেলায় ভোট চলাকালীন মোদির সভা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্য কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছিল তৃণমূল। সম্প্রচার অবশ্য রোখা যায়নি। শেষে মোদীর নাম না-করে তীব্র বিষোদগারই করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
বস্তুত, মমতার এই প্রতিক্রিয়ার ধরন নিয়েই এ দিন লাগাতার কটাক্ষ চালিয়ে যান মোদি। বলেন, “দিদি ভয় পাচ্ছেন, এই বুঝি মোদি এসে গেল! আগে ওঁর মাথায় ঢুকেছিল বাম। বামেদের পথেই চলছিলেন এখন মাথায় ঢুকেছে মোদি-মোদি!” পরে আরও তির্যক সুরে তাঁর মন্তব্য, “দিদি চিৎকার করছেন, ঘেমে যাচ্ছেন! আমার জন্য দিদি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এটা চলবে না। ডাক্তার বন্ধুদের বলব, এইটুকু সাহায্য আপনারা করবেন!”
নারী নিগ্রহের ঘটনায় সাম্প্রতিক কালে বারবার শিরোনামে এসেছেবারাসত। রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে এসে মোদী তাই বারাসতের কাছারি ময়দানের সভাতেই বেশি করে বলেন নারী নির্যাতনের কথা নাম না-করে দু’বার তোলেন রাজীব দাস হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বারাসত স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে কাছারি ময়দানের পাশেই দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে মদ্যপ দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব
মোদি বলেন, “এই মাঠের কাছেই দিদির সামনে ভাইকে খুন করা হয়েছিল। এখনও বিচার হয়নি। বাংলায় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।” এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “যারা ধর্ষণ করে, তাদের উপরে আপনার কোনও রাগ নেই? যত রাগ মোদির উপরে?” পরে ফের রাজীব দাস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “টিভিতে দেখবেন, দিদি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, মা-বেটা বলছে, যা হচ্ছে হোক। আগে মোদিকে আটকাও! কারণ ওরা জানে, মোদি এলে ওদের জায়গা কোথায় হবে!”
রাজীবের দিদি রিঙ্কু দাস এ দিন বলেন, “আমাদের ওই ঘটনা নিয়ে এখন তো কেউ কোনও কথা বলছে না। ওঁর মতো মানুষের যে আমাদের ঘটনাটা মনে আছে, তাতে আমি ভরসা পাচ্ছি উনি যদি সত্যিই দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করেন, তবে আমরা শান্তি পাব”