সারাদেশে সাংগঠনিক রেড এলার্ট জারি

Khaleda Ziaসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ গুম ও খুনের প্রতিবাদে রাজপথে গণপ্রতিরোধ ও সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক রেড এলার্ট জারি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘১ মে দিবস’ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত গণসমাবেশে এ ঘোষণা দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে যত গুম ও হত্যাকাণ্ড ঘটছে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা জড়িত। তাদের নির্দেশেই এসব গুম ও খুন সংঘটিত হচ্ছে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড এ সরকারের নির্দেশেই সংঘটিত হয়েছিল।’
নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে সাত জনকে অপহরণ করে হত্যা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাকেই এর দায়ভার নিতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডের জবাব তাকেই দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের হাতে দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, অপহরণ করছে, খুন-গুম করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনিয়ে প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘জঙ্গিদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ঘটনায় সম্প্রতি যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা যুবলীগ নেতার নির্দেশে এটি করেছে বলে স্বীকার করেছে। শীর্ষ জঙ্গি আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের ভগ্নিপতি ছিলেন। আমরাই আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। সুতরাং জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপি নয় আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে খুনি ও রক্ত পিসাসু সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি সারা দেশে সাংগঠনিক রেড এলার্ট জারি করছি। সবাই সর্তক থাকবেন। কেউ খুন ও গুম করতে এলে তাকে আটকে রাখবেন। যদি সে পুলিশ ও র‌্যাবও হয় তাদের আটকে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেবেন।’
মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান চালানো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মতিঝিলে সেদিন হেফাজতের নেতাকর্মীরা কি করেছিল। তারাতো মাত্র রাস্তায় বসেছিল। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না। তাদের হাতে ছিল জায়নামাজ, তসবিহ আর কোরআন শরিফ। তাদের কেন নির্বিচারে হত্যা করা হলো।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সেদিন যদি সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিত তাহলে আর্মি অফিসারদের জীবন রক্ষা করা যেত। সেদিন সেনাবাহিনীকে অ্যাকশনে যেতে দেয়া হয়নি। পরিকল্পিতভাবে সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ আজ ভয়াবহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। পুলিশ, সরকার সবাই আজ দুর্নীতি করছে। চেন অব কমান্ড বলতে কিছু নেই। যার পরিণতি আজ দেশে খুন, গুম হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুলসহ যে সাত জনকে হত্যা করা হলো তার কৈফিয়ত সরকারকে একদিন দিতে হবে।’
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘কোথায় ইলিয়াস আলী? চৌধুরী আলম কোথায়? আপনারা (সরকার) বলেছিলেন, মানুষের বেডরুম পাহারা দিতে পরবেন না। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ সম্প্রতি যাদের গুম করা হচ্ছে তাদের তো রাস্তা থেকে গুম করা হচ্ছে। আপনারা তো রাস্তাও পাহারা দিতে পারেন না। ’
তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, মন্দির, জমি-জমা, অলঙ্কার লুট করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। যাদের হাতে দেশের মানুষ নিরাপদ নয়, দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, স্বাধীনতা নিরাপদ নয়, তাদের হাতে ক্ষমতা থাকতে পারে না।’
বর্তমান সংসদ অবৈধ দাবি করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সংসদের স্পিকারই নির্বাচিত না। তিনি এ চেয়ারকে অসম্মান করতে পারেন না। এ পার্লামেন্টের ১৫৪ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা শতকরা পাঁচ ভাগ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন কাজেই তাদেরও নির্বাচিত বলা যায় না। কাজেই এ সংসদ বৈধ হতে পারে না।’
অবিলম্বে অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখনো সময় আছে সংসদ ভেঙে দিয়ে আলোচনায় বসুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, অন্যথায় সব অপকর্মের জবাব আপনাদের কাছ থেকে জনগণ আদায় করে নেবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদে তিনশ’ সদস্যের মধ্যে ২২৬ জন দুর্নীতির টাকায় কোটিপতি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪২ জন কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এখনো সময় আছে, সরকারের ২২৬ জন দুর্নীতিবাজ ও কর ফাঁকি দেয়া ৪২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় এজন্য আপনাদের জবাবদিহী করতে হবে।’
সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অচিরেই আমি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নামব। আমি রাজপথে বের হলেই বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক ও পুলিশ দিকে আটকে রাখে। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আপনাদের সঙ্গে রাজপথে নামবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নাসিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।