ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার কেউ নেই: সাকিব
সুরমা টাইমস স্পোর্টসঃ দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, সবখানেই এখন চলছে সেই ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত। এ নিয়ে কী ভাবছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান।
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে মঙ্গলবার দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
টি-টোয়েন্টি কেমন খেলে বাংলাদেশ?
সাকিব: আমরা খুব একটা খারাপ খেলছি বলবো না। অবশ্যই আমাদের উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। টি-টোয়েন্টিতে জিততে হলে দুই-তিনটা বিশ্বমানের বোলার দরকার। এই জায়গাটাতে আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। অনেক সময় ১৫০/১৬০ করেও আমরা হেরে যাই, যা অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে হয় না। অন্যান্য দল ১৫০/১৬০ রান করলে ওদের ম্যাচে জেতানোর ওরকম বোলারও আছে।
একই সঙ্গে আমাদের ছয় বা সাত নম্বরে এমন ব্যাটসম্যান দরকার যারা দুই-এক ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। টপ অর্ডার আর মিডলঅর্ডারে এমন ব্যাটসম্যান দরকার, যে কিনা এসেই মারতে পারে। আমাদের তো আর ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়ার মারমুখী ব্যাটসম্যান) নেই।
প্রশ্ন :তাহলে তো অনেক জায়গাতেই উন্নতি করতে হবে বোঝা যাচ্ছে। কীভাবে হবে এই উন্নতিটা?
সাকিব: আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি করা লাগবে। একই সঙ্গে দলের কথা চিন্তা করলে, উন্নতি করার অনেক জায়গাই আছে। তবে ভালো করতে হলে প্রক্রিয়াটা কী হবে তা বলা মুশকিল। হয়তো বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। দলের অনেকেই খুব বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেনি; বিশ্বকাপের মতো জায়গায় ওরা যখন একটা ম্যাচ যখন খেলতে যায়, তখন একটু নার্ভাস হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: আপনারাই অনেক সময় বলেন, টি-টোয়েন্টিতে ছোট আর বড় দলের খুব একটা পার্থক্য থাকে না। ছোট দলগুলো বাংলাদেশকে হারালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো বড় দলকে বাংলাদেশ হারাতে পারেনি কেন?
সাকিব: এটা বলা মুশকিল। পার্থক্য থাকে না বলা ঠিক হবে না; পার্থক্যটা কমে যায়। আমার কাছে মনে হয়, এই জায়গায় উন্নতি করতে হলে দল হিসেবে আমাদের নিয়মিত আরো বেশি ম্যাচ খেলা উচিৎ। গত দশ বছরে আমরা অনেকগুলো ওয়ানডে ম্যাচ খেলছি বলেই ওয়ানডেতে কিন্তু আমরা মোটামুটি একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।
আর যেটা বললাম, আমাদের ঐ ধরনের এক/দুইজন খেলোয়াড় নেই যারা একাই দলকে জিতিয়ে দিতে পারে। টি-টোয়েন্টি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো দলে দেখেন, দুইজন থেকে তিনজন ভালো বোলিং করে; আর সর্বোচ্চ দুইজন ভালো ব্যাটিং করে। এই জিনিসগুলো আমাদের হয় না।
আমরা যখন জিতি, দলগত সাফল্যটাই সবার আগে আসে। তাতে সবারই অবদান থাকে। এই জন্যই আমারা ওয়ানডে ভালো খেলি। সেখান সবার অবদান রাখার সুযোগটা বেশি থাকে। সেদিক থেকে টি-টোয়েন্টিতে এটা অনেক কম হয়।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ চলার সময়ে বলেছিলেন, আমাদের নিশ্চয়ই ‘প্রসেসে’ কোনো ভুল আছে। ভুলটা কোথায় ছিল এখন কি তা বুঝতে পেরেছেন?
সাকিব: ভুল তো কোথাও না কোথাও হয়েছে। সব ঠিক থাকলে তো আমাদের রেজাল্টও ঠিক থাকতো। ঠিক তো সব জায়গায় ছিল না। কোথায় কোথায় ছিল না, সেটা বলাটাও এতো সহজও না। তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমরা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি। তার প্রভাব দলের ওপর পড়ছে। একই সঙ্গে দলের কয়েকজন মূল খেলোয়াড় পারফর্ম করতে পারে নাই। আমার কাছে মনে হয়, এই সবগুলো মিলিয়েই দলের এমন ফলাফল।
প্রশ্ন: বলা হয়, টপ অর্ডার খেলা তৈরি করে দেয়। অথচ দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের নিচে নামিয়ে দেয়া হলো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এই পরিকল্পনা কি নেতিবাচক ছিল?
সাকিব: বলা মুশকিল। এটা কোচ আর অধিনায়ককে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। চিন্তাটা প্র্রধানত তাদের মাথা থেকেই আসছে। ওরা এসে আমাকে বলছে, আমি যদি চারে থাকি, দলের ভারসাম্যটা ভালো হবে। আমি বলছি, কোনো সমস্যা নাই। দলের জন্য যে কোনো জায়গায় খেলতে পারি। এ কারণেই আমি চার নম্বরে খেলছি। তবে টি-টোয়েন্টিতে আমি টপ অর্ডারে খেলাটাই পছন্দ করি।
প্রশ্ন: আপনি তো পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেললেন। দল আর ব্যক্তিগত প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মিলেছে?
সাকিব: দল হিসেবে আমরা কোনো বিশ্বকাপেই ভালো করি নাই। শুধু প্রথমটাতে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি। আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও সেভাবে দেখাতে পারিনি। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়, এবারই অন্যগুলোর চেয়ে ভালো খেলেছি। এবার বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলছি, অন্যান্য বার তো দু’টি করে ম্যাচ খেলছি। মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলে আপনি বলতে পারবেন না যে, কতটা ভালো বা খারাপ খেললেন। অন্তত পাঁচটা ম্যাচ খেললে আপনি নিজেকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন।
প্রশ্ন: বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, সাকিব ছাড়া আমাদের তেমন কোনো বিশ্বমানের স্পিনার নেই।
সাকিব: হয়তো এই বিশ্বকাপে সেভাবে কেউ খেলতে পারে নাই। তবে আমার ভরসা আছে, আমাদের স্পিনাররা সবাই সবার সেরাটা দিতে পারলে আমরা ভালো করবো। বলছি না যে, আমাদের বিশ্বমানের কোনো স্পিনার আছে। তবে আমরা পুরো দল মিলে বিশেষ করে ওয়ানডেতে কোনো দলের বিপক্ষে খারাপ করবো না।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক বিতর্কে ভক্তরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সাকিব: আমিও চাই না যে, কোনোভাবে বিতর্কে জড়াই। হয়তো এরপর থেকে আরো বেশি সতর্ক থাকা লাগবে। আমি কখনো বিতর্কিত হওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করি নাই। ভক্তদের ব্যাপারটা আমার মনে থাকবে, অবশ্যই চেষ্টা করবো আর বিতর্কে না জড়াতে।