কলেজ ছাত্র সোহানের খুনীরা জামিনে এসে বেপরোয়া
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর ছেলে কলেজছাত্র সোহান ইসলামের খুনিরা জামিনে বেরিয়ে এসেই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এমনকি সোহান হত্যা মামলা তুলে নিতে বাদীর বাসায় হামলা চালিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে পুলিশও নিস্ক্রিয় ভুমিকা পালন করছে। বুধবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোহানের পিতা শেখ তাজুল ইসলাম এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত সোহানের মা সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘাতকদের হামলার শিকার হতে পারেন তারা। খুনিরা পূর্বের মতো এলাকায় ফিরে আসায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করা হয়
গত ২৬ জানুয়ারী ছোট বোনকে নিয়ে স্কুল থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাসায় ফিরছিল সিলেটের কলেজ ছাত্র সোহান ইসলাম। পথিমধ্যে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আসা মাত্র সোহান ইসলামকে কুপিয়ে খুন করে এলাকার পেশাদার সন্ত্রাসী শাকিল পিচ্ছি শাকিল, ছিনতাইকারী টিপু, জামাল ওরফে কুত্তা জামাল, আমির, ডাকাত রিপন, কোর্ট দালাল জামাল আহমদ, দালাল গুলজার আহমদ, কামাল, সন্ত্রাসী সাকিব, টুকাই রিয়াজ, কসাই কামরুল। ঘটনার সময় সোহানকে বাঁচাতে ছোট মেয়ে স্বর্ণা লামাবাজার ফাঁড়িতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পা ধরে সাহায্য চাইলেও পুলিশ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
ঘটনার প্রায় দুই মাস পর গতকাল নিহত সোহানের পরিবার ও এলাকার লোকজন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত টিপু ও আমীর এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। এছাড়া খুনের ঘটনার মুল হোতা গুলজার আহমদ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে এখন বাদী ও পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সোহান হত্যার আসামি গুলজার আহমদ। সে নিজেকে সমাজসেবী দাবি করেছে। গুলজার রাতের আধারে মদ খেয়ে মাতলামি করে। তার কোনো পেশা নেই। বিচারের নামে মানুষের উপর নির্যাতন আর দালালি করাই তার পেশা। এছাড়া এলাকার চিহ্নিত দাগি আসামিদের নিয়ে গ্র“প করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে গুলজার।
সোহানের হত্যাকারী কামাল উদ্দিন ওরফে ছিনতাইকারী কামাল আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা ঝুটন হত্যা মামলার জাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। এছাড়াও জাফলংয়ে জমি দখল করতে গিয়ে গুলি করে স্কুল ছাত্রকে খুন করে। শেখ তাজুল জানান, গত ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে খুলিয়াটুলা রাস্তার প্রবেশ দ্বারে ভিআইপি সড়কে গুলজারের হুকুমে আমার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় একই এলাকার টিটু, জনি, রিপন, আব্দুর রহিম, তোফায়েল, তামিম, নুরু, সবুজ, রাজিব, রুমন, রিয়াজ। এ ব্যাপারে শাহান বেগম শানু বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাও দায়ের করেন। এর আগে একই বছরের ২৩ এপ্রিল আমার স্ত্রী সাবেক কাউন্সিলর শাহান বেগম শানুর উপর হামলা করে ওই একই গ্র“পের সদস্যরা। এ ঘটনায় আমার সমন্ধি বাদি হয়ে শুক্কুর, কালা শাহ, রিয়াজ, তেরা মিয়া সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা নাকি আদালত পাড়ায় পুলিশ হেফাজত থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আদালত পাড়ায় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং আমার স্বজন ও এলাকাবাসী ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ দাবিতে মিছিলের সুর তোলায় ভ্রাম্যমান আদালত আটকের পর ছেড়ে দেয়। অথচ এই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তাছাড়া, সোহান হত্যার পর দিন আমার পরিবার শোকে স্তব্দ। তিনি আরও জানান, সোহান হত্যা মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসে। এর পরপরই গত ৮মার্চ গুলজার, রিপন, কামরুল, রিয়া, শাকিবসহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্তআসামিরা সশস্ত্র অবস্থায় আমার বাসায় হামলা করে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক কোতোয়ালি থানায় জানানো হলে পুলিশ আসায় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে ছেলের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার দাবি করে তাজুল ইসলাম।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সোহান হত্যা মামলার আসামি গুলজার আহমদের ভাগ্নি আফরোজা বেগম, তার স্বামী সুজন মিয়া অভিযোগও করেন, গুলজার জোরপূর্বক জমি দখল করতে গিযে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা বলেন, গুলজার ও চক্রের ভয়ে এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে খুলিয়াটুলা এলাকায় ছায়া বেগম, সফজান বেগম, শাহানা বেগম, সামসুন্নেছা, সাদেক আহমদ, সিরাজ আহমদ, জামাল মিয়া, মিরাজ আহমদ, শাকিল আহমদ, রিপন মিয়া, সফু মিয়া, এমরান ইসলাম, রাব্বি হোসাইন, শেখ মো রফিক ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আমান আহমদ, কয়েছ আহমদ, অজয় ভট্রাচার্য সহ এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।