মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয়ের সম্ভাবনা

1আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজার-৩ আসনের দুঠি উপজেলায় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির ভরাডুবি সহ আওয়ামীলীগের বিজয়ের সম্ভাবনা তথই প্রকট হয়ে উঠছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারী জেলার প্রথম উপজেলা নির্বাচনে কুলাউড়ায় দলীয় কোন্দলের কারনে আওয়ামীলীগের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে বিএনপিকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি জেলার বাকী ৬টি উপজেলাও হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমান বলয়ের সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির এবং কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক স¤পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ স¤পাদক খালেদা রব্বানী বলয়ের মোঃ মিজানুর রহমান মিজান পৃথক পৃথক ভাবে ১৯ দলের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ৫ মার্চ বিকেলে তার গুলশানস্থ বাসায় মিজানুর রহমান মিজানকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব মৌলভীবাজার টিম লিডার মো: শাহজাহানের উপস্থিত ছিলেন। তাকে মনোনীত করায় বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বেগম খালেদা রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়। কিন্তু এম. নাসের রহমান বলয়ের নেতারা বিষয়টি মানতে নারাজ। এম. নাসের রহমান মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান- ৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্য্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তার বিস্তারিত আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মোঃ সালাহউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্র থেকে আব্দুল মছব্বিরকেই পূর্ণ সমর্থন দেয়া হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত করেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। কাজেই মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় আব্দুল মছব্বিরই বিএনপি’র প্রার্থী। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মুঠোফোনে বলেন- মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ও বিস্তারিত নির্দেশনা জেলা সভাপতিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারন ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান- কেন্দ্রই সবকটি উপজেলায় বিএনপি যাতে বিজয়ী না হয় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মৌলভীবাজার সদর আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী বদল করা যায়। সদর ও রাজনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের রয়েছে যেমন একাধিক প্রার্থী, তেমনি ১৯ দলীয় জোটের ও র‍যেছে একাধিক প্রার্থী।জামায়াত রাজনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তাই এ দুই উপজেলার নির্বাচন নিয়ে আছে ভোটারদের বাড়তি কৌতূহল। জেলার সবকটি উপজেলায় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারলেও রাজনগর এবং সদর উপজেলায় এর ব্যত্যয় ঘটে। চেয়ারম্যান পদে এই দুই উপজেলায় জেলা আওয়ামীলীগের দুই ধারার দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদর উপজেলায় প্রার্থী তৃণমূলের মনোনয়নের পূর্বে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী বিভিন্ন সভায় নিজের পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় বিতর্ক শুরু হয়। এ বিতর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে- যদিও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ তৃণমূল নেতাদের ভোটাভোটির মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। নির্বাচনের স্থান নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। আওয়ামীলীগের এক প্রার্থী অভিযোগ করেন, ভোট প্রভাবিত করার জন্য সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাড়িতে তৃণমূলের সভা ও ভোটের আয়োজন করা হয়। নিরপেক্ষ স্থানে ভোটের আয়োজন না করায় ওই সভায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক জেলা সভাপতি বা স¤পাদক কেউই উপস্থিত ছিলেন না। সাধারণ স¤পাদকের পক্ষে এ ব্যাখ্যার বিপরীতে সদর উপজেলা কমিটির পাল্টা ব্যাখ্যা ছিল, যে স্থান থেকে বিগত ১৫ বছর ধরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে সেটি শুধু মন্ত্রীর বাড়ি হিসেবে নয়। তারপরও প্রার্থী মনোনয়ন কার্যক্রম হয় এবং দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মুহিবুর রহমান তরফদারের নাম প্রকাশ করা হয়। এর বিরোধিতা করে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক কামাল হোসেন। তিনি তৃণমূল নির্বাচনে মন্ত্রীর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বরাবরে আবেদন করেছেন। এই আবেদনে জেলা কমিটির সভাপতি, স¤পাদক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক বিবরণ সত্য বলে স্বাক্ষর করেন। এখন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন সমান তালে। কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। অপরদিকে রাজনগর উপজেলায়ও একইভাবে আওয়ামীলীগের দুজন প্রার্থী রয়েছেন। সেখানে প্রথমদিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক বৈঠক আহ্বান করেন এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে সাধারণ স¤পাদক আছকির খানের নাম ঘোষণা করা হয়। পরের দিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিছবাহুদ্দোজা ভেলাইর বৈঠক আহ্বান করেন এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে বর্তমান চেয়ারম্যান মিছবাহুদ্দোজা ভেলাইর নাম ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত দুজনই মাঠে নিজেদের পক্ষে ভোট চাইতে দলীয় ভোটারদের দ্ধারে-দ্ধারে ঘুরছেন।রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা,হাট-বাজার ঘুরে নানান পেশার মানুসের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত আওয়ামীলিগের এই দুইজন প্রার্থীর মধ্যে মন্ত্রী সমর্থিত আছকির খানের দোয়াত-কলমের অবস্থান ভালো।এর কারন হিসাবে আওয়ামীলিগের নেতাকর্মীদের অভিমত মিছবাহুদ্দোজ্জা ভেলাই গত নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে দলীয় নেতা-কর্মীরা তার কাছে কোন প্রকার মুল্যায়ন পাননাই।বরং দলের তৃনমুলের নেতা-কর্মীরা উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে ও জামাইর কাছে জিম্মি হয়ে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন।টিআর-কাবিখা সহ সরকারীভাবে বিভিন্ন প্রজেক্টে আসা অর্থ সহ বরাদ্ধের চাল-গমের এক অংশ তাদেরকে কমিশন না দিয়ে কেউ উত্তোলন করা সম্বব হয়নি।এ নিয়ে রাজনগরে তারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল।এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসার মত প্রতিষ্টানের উন্নয়নে বরাদ্ধের চাল-গম ও নাম মাত্র মুল্যে তাদের কাছে বিক্রি করে আসতে হয়েছে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর গ্রুপ করার কারনে উপজেলা চেয়ারম্যানের ইশারায় আব্দুল কাদির পাখি মিয়া নামের এক মামলাবাজের দায়েরকৃত মিথ্যা চাদাবাজি মামলায় ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান মঙ্গলকে জেল ও খাটতে হয়েছে। এসব বিভিন্ন কারনে তৃনমুলের আওয়ামীলিগ নেতা-কর্মীরা চাইছে পরিবর্তন। অন্যদিকে রাজনগর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে ১৯ দলের প্রধান শরিক দল জামায়াতের সঙ্গে এম. নাসের রহমান সমর্থিত বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন আছে। জামায়াতের দাবি ছিল রাজনগরে ১৯ দলের একক প্রার্থী থাকবেন জেলা জামায়াতের আমির আবদুল মান্নান। কিন্তু এম. নাসের রহমান রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামি আহমদকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা দেন। আর এ নিয়েই দূরত্ব বাড়ে এম. নাসের রহমানের সঙ্গে জামায়াতের। এদিকে দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই দূরত্বের সূত্র ধরে জামায়াত মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ভিপি মিজানকে সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে রাজনগরে বিএনপির খালেদা রব্বানী বলয়ের নেতাকর্মীরা সমর্থন করেছে জামায়াত নেতা আবদুল মান্নানকে।তাই আওয়ামীলিগের মন্ত্রী সমর্থিত আছকির খান এর ফায়দা ভোগ করবেন বলে নানা পেশার মানুসের অভিমত। এ নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। অন্যদিকে পূর্ব থেকেই বিরোধ আছে মৌলভীবাজারে ১৯ দলের আরেক শরিক দল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এম. নাসের রহমানের। রাজনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খেলাফত মজলিসের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আহমদ বিলাল। তাই সবার দৃষ্টি এখন এই দুই উপজেলা নির্বাচনের দিকে।