পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কী শেখানো হচ্ছে?

শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ: বর্তমান শিক্ষা সিলেবাস তথা পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষাদানের নামে কোমলমতি মুসলিম শিশু-কিশোরদের এমন সব বিষয় শেখানো হচ্ছে, যা সত্যিই বিষ্ময়কর। এসব বিষয় পড়ে কোমলমতি মুসলিম শিক্ষার্থীদের সঠিক আক্বীদা থেকে ভ্রষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ঈমান-আক্বীদা, যা ৯৮% মুসলমান অধ্যুষিত দেশে কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে পড়ালেখার নামে কী শিখানো হচ্ছে আসুন দেখি-

৮ম শ্রেণী:
বই: আনন্দ পাঠ (দ্রুত পঠন)
গল্পের নাম: রামায়ন-কাহিনী (আদি কাণ্ড)
লেখকের নাম: উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী
পৃষ্ঠা: ৫৭-৬৫

পাঠ্যের মূল বিষয়বস্তু: হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋষি বাল্মীকি রামায়ণের রচয়িতা। এই গ্রন্থটি হিন্দুশাস্ত্রের স্মৃতিবর্গের অন্তর্গত। মূলত ৯৮% মুসলমান অধ্যুষিত এদেশের পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুদের এ কল্পকাহিনীযুক্ত করে মুসলিম শিশু-কিশোরদের মনে-মগজে হিন্দুত্ববাদ বদ্ধমূল করা হচ্ছে, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। নাউযুবিল্লাহ!

৬ষ্ঠ শ্রেণী:
বই: আনন্দ পাঠ (দ্রুত পঠন)
প্রবন্ধের নাম: রাসূলের দেশে
লেখকের নাম: ইব্রাহীম খাঁ
পৃষ্ঠা: ৪৪-৪৮

প্রবন্ধটির ভাষ্য:
“মরুসূর্য মুহাম্মদ (স.) নতুন আলোকের পরশে আরবের বালুকণা রাশি পর্যন্ত জ্বলে ভাস্বর হয়ে উঠে। দিকে দিকে গড়ে উঠে নতুন নতুন জাতি, নতুন নতুন রাজ্য, নতুন নতুন সভ্যতা।
তারপর মুসলমানদের জাতীয় জীবনে শুরু হয় অবনতির ভাটা। ইসলামের সত্য সনাতন আদর্শ ভুলে তারা চলে ভুল পথে, ডেকে আনে নিজেদের মৃত্যু, আজরাইল শিওরে এসে বসে জান কবজ করতে তৈরি হয়।
এ সময় আবির্ভাব ঘটে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাবের। মধ্য আরবের অন্তর্গত আজাইনাতে জন্ম, বসরা দামেস্কে ও মক্কায় অধ্যয়ন শেষ করে এ সংস্কাকর ১৮৫০ সালে জন্মভূমিতে ফিরে আসেন ও ঘোষণা করে মুসলমানরা ইসলামের পথ হতে অনেক দূরে সরে গেছে। তাদের আজকের এই দুর্বলতা এই বেইজ্জতিরই জন্য। অতএব, মুসলমানকে আগের পথে ফিরে যেতে হবে, ধর্মে ফিরে যেতে হবে, ধর্মে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই তার পুনর্জীবন লাভের একমাত্র পথ। যা ইসলামের বিরোধী তার সাথে কোনো আপোস নেই, কারণ সে আপোসের পরিণাম জাতির অধঃপতন।”

প্রবন্ধটির মাধ্যমে যা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে:
বলা হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর মুসলমানরা ইসলাম থেকে দূরে সরে যায় এবং সে সময় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব সংস্কার করে পুনরায় আগের ইসলাম ফেরত আনে। নাউযুবিল্লাহ! এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বা আব্দুল ওহাব নজদী সংস্কারক বা মুজাদ্দিদ নয়, বরং বাতিল আক্বীদা সৃষ্টকারী ব্রিটিশ দালাল। এজন্য সকল হক্কানী-রব্বানী ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা আব্দুল ওহাব নজদীকে একযোগে কাফির বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
আব্দুল ওহাব নজদী’র জন্ম মূলত ব্রিটিশদের থেকে। ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার দীর্ঘদিন আব্দুল ওহাব নজদীর পেছনে কাজ করে একটি ভ্রান্ত মতবাদ জন্ম দেয়, যা ‘ওহাবী’ মতবাদ নামে পরিচিত। এ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার নিজেই তার স্বীকারক্তিমূলক গ্রন্থ ঈঙঘঋঊঝঝওঙঘঝ ড়ভ. অ ইজওঞওঝঐ ঝচণ ধহফ. ইৎরঃরংয ঊহসরঃু অমধরহংঃ ওংষধস-এ বিস্তারিত বর্ণনা করেছে।
ইতিহাস বলছে যে, আব্দুল ওহাব নজদীর আক্বীদা গ্রহণ করেই পরর্বর্তী নজদের ডাকাত ‘সউদ’ পরিবার প্রভাব বিস্তার করে এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা টি. লরেন্সের সহযোগিতায় জাজিরাতুল আরবের ক্ষমতায় দখল করে। এ সময় তারা আরবের সমস্ত পবিত্র স্থাপনা ও পবিত্র মাজার শরীফগুলো গুড়িয়ে দেয় এবং জাজিরাতুল আরবের আদি নাম পরিবর্তন করে নিজ পরিবারের নাম অনুসারে ‘সউদী আরব’ রাখে। এবং অভিশপ্ত নজদের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘রিয়াদ’।
নাউযুবিল্লাহ!
তাই পাঠ্যপুস্তকে ‘রাসূলের দেশে’ নামক প্রবন্ধের উদ্দেশ্য কখনোই ভালো নয়, বাংলাদেশের সুন্নী মুসলমানদেরকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম থেকে সরিয়ে ঈমান নষ্ট করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন-মগজে ভ্রান্ত ‘ওহাবীজম’ ছড়িয়ে দেয়াই এর কুটউদ্দেশ্য। নাউযুবিল্লাহ!

৬ষ্ঠ শ্রেণী:
বই: আনন্দ পাঠ (দ্রুত পঠন)
প্রবন্ধের নাম: ওকিং মসজিদে ঈদের জামায়াত
লেখকের নাম: আব্দুল হাই
পৃষ্ঠা: ৪৯-৫২

প্রবন্ধটিতে বলা হয়েছে:
“নামায হলো আরবীতে। কিন্তু ইমাম সাহেব খোতবা পড়লেন সকলের বোধগম্য ভাষা ইংরেজিতে। যাদের কাছে খোতবা পড়া হয়, তাদের ইসলামের সার কথা বোঝানোই খোতবার অর্থ। ওখানে নানা দেশের নানা লোক এসেছিলো। এরা মোটামুটি সকলেই ইংরেজি বোঝে। খোতবায় ইমাম সাহেব বুঝাচ্ছিলেন। সকলের শোনার ধরন দেখে মনে হলো সকলেই তা বুঝছে। ইংল্যান্ডের মতো আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমাদের দেশে যদি মাতৃভাষায় খোতবাটা পড়ানো হতো, তাহলে অনেক মঙ্গল হতো আমাদের সাধারণ মুসলমানদের।”

প্রবন্ধের ব্যাখ্যা: জুমুয়ার খুতবা আরবীতে হওয়াই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সঠিক ফতওয়া। এতদিন বাংলাদেশে সেটাই চলে আসছে। তবে বাতিল আক্বীদাভুক্ত আহলে হাদীস, সালাফী ও ওহাবীরা সেটার পরিবর্তন করতে চায়। বর্তমান শিক্ষা সিলেবাসে বাতিল আক্বীদাভুক্ত আহলে হাদীস, সালাফী ও ওহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদা প্রবেশ করিয়ে বাংলাদেশে এতদিন চলমান ছহীহ ইসলাম ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
——————–
সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’
। এদেশে প্রত্যেকটি নাগরিক সাংবিধানিকভাবে তার ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকল মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীও তাদের সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ করার দাবি রাখে। পড়ালেখার মাধ্যমে তারা এমন কোনো কিছু শিখবে না, যা দ্বারা তাদের ঈমান ও আক্বীদা ধ্বংস হয়, এটা অবশ্যই তাদের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ পাঠ্যপুস্তকের নামে অবুঝ ছাত্র-ছাত্রীদের যা শেখানো হচ্ছে তা নির্মম ধোঁকাবাজি ছাড়া অন্যকিছু নয়, এটা অবশ্যই তাদের সাংবিধানিক ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ণ করার শামিল। তাই ৯৮% মুসলমান অধ্যুষিত দেশের পাঠ্যপুস্তক থেকে সমস্ত ওহাবীবাদ, বাউলতত্ত্ব, হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বাদ দিতে হবে- এটাই সমস্ত মুসলমানগণ উনাদের ঈমানী দাবি।