নিউ ইয়র্কে বাঙ্গালী গৃহবধূর সঙ্গে শাশুড়ি-স্বামীর এ কেমন মধ্যযুগীয় বর্বরতা?
ডেস্ক রিপোর্টঃ মা পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দিল এবং সে নির্দেশ মেনে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করল স্বামী, একই কক্ষে পিঠমোড়া করে বাঁধা মায়ের এ অসহায় অবস্থা প্রত্যক্ষ করে অবুঝ দুই কন্যা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, এর পর শুরু হয় মধ্যযুগীয় বর্বরতা। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তরুণী বধূ। তবুও শাশুড়ির হৃদয়ে সামান্য দরদ হচ্ছে না। নগ্ন বধূর যোনীর ভেতরে কাঠ পেন্সিল ঢুকিয়ে দিতে বললো নগ্ন পুত্রকে। বিনা বাক্য ব্যয়ে তাই করলো পাষন্ড পুত্র।
এরপরেও কমেনি নির্যাতনের মাত্রা। অবিশ্বাস্য এ পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয় নিউইয়র্ক পুলিশের সামনে। শাশুরিকে সাথে সাথে গ্রেফতার করেছে কুইন্স পুলিশ। সে সময় ঘরে ছিল না পাষন্ড স্বামী। মায়ের গ্রেফতারের সংবাদ জেনে সে এটর্নীসহ পুলিশ প্রেসিঙ্কটে যায়। সেখানে পুলিশের সাথে উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময়ের এক পর্যায়ে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে বর্বরোচিত এ ঘটনাটি এখন কম্যুনিটির অনেকের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এবং ধিক্কার আর ঘৃণা বর্ষিত হচ্ছে বর্বর পুত্র আর তার মায়ের প্রতি।
নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ায় ৩৪ স্ট্রীটের এপার্টমেন্ট বিল্ডিঙ্গের নীচ তলায় এক বেডরুমের বাসায় তরুণী বধুকে এভাবে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী সাঈদ ইশতিয়াক চৌধুরী (৩৪) এবং তার মা হুসনে আরা বেগম (৬৫)কে ২৭ জুন গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতিতার আশে পাশে আসতে ঐ দুজনকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মাননীয় আদালত। কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শিশুর নিরাপত্তাহীনতা এবং অকথ্য নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
হুসনে আরা বেগম এবং তার পুত্র জামিনে মুক্তি পেলেও তরুণীর আশে পাশে যেতে মানা করা হয়েছে কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত। ১৫ জুলাই তাদের মামলার শুনানীর তারিখ বলে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নীর অফিস থেকে ঠিকানাকে জানানো হয়েছে। ৩০ জুন এ সংবাদদাতা এস্টোরিয়ার ঐ বাসায় গিয়ে স্বামী-শাশুরির নিষ্ঠুর নির্যাতনে ভীত-সন্ত্রস্ত তন্বীর সাথে কথা বলেন। জানা যায়, গত সাড়ে ৪ বছরের জিম্মি দশার করুণ কাহিনী। কারো সাথে কথা বলা এবং মেলামেশা নিষেধ ছিল।
সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতালে যাওয়া এবং সন্তানের এপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী স্বামী আর শ্বাশুড়ির সাথে চিকিৎসকের কাছে যাতায়াতের সময়ে সে নিউইয়র্ক সিটির রাস্তা আর যানজট প্রত্যক্ষ করেছেন। শুধু তাই নয়, তার আড়াই বছর এবং দেড় বছরের দুই কন্যা শিশুর জন্যে স্বাস্থ্য দফতরের দেয়া উইক প্রোগ্রামের চেক দিয়েও শিশু কাদ্য আনা হত না। পরিচিত দোকানীর সহায়তায় শাশুড়ি এবং স্বামীর পছন্দের মাংস-মাছ আনা হত। তাকে কখনই মাংস কিংবা মাছের তরকারি খেতে দিত না।
অথচ সমস্ত রান্না করতে হত তাকেই। শিশু সন্তানের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় প্রতিবারই চিকিৎসক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার সাহস হয়নি শাশুড়ির নির্দয় আচরণের তথ্য প্রকাশের। তিনি বলেন, শ্বশুড়ের মৃত্যুর পর আমার স্বামী তার মায়ের সাথে এক খাটে ঘুমান। এয়ারকন্ডিশন তাদের রুমে। তারা দরজা বন্ধ করে দেন। আমি এবং দুই কন্যা নিয়ে প্রচন্ড গরমে সারারাত ছটফট করি। একইভাবে শীতের রাতেও আমাকে গরম কাপড় দেয়া হয় না। তিনি বলেন, স্বামী লিভারী চালান। গভীর রাতে বাসায় ফেরেন। দুপুরে কাজে যাবার আগে খাবার দিতে হয়। এটি প্রতিদিনের কাজ। সকাল ১০ টার আগে শ্বাশুড়ির নাস্তা এবং ঘরের সমস্ত কাজ সারতে হয়।
রপর শুধু হয় দুপুরের রান্নার কাজ। এরই মাঝে স্বামীর ঘুম ভাঙলে তিনি আমার উপর চেটে যান, কেন দেরী হচ্ছে রান্নাবান্নায়। আমাকে কাজের লোক হিসেবে ব্যবহার করেছে প্রতিদিন। আমার সন্তানদের শিখিয়েছে আমাকে চাকরাণী ডাকতে।
ওরা তাই শিখেছে। মা বলে ডাকে না। অনেক রাতে আমাকে বাথরুমে ঘুমাতে হয় চাকরাণীদের মতই। তিনি বলেন, ২৭ জুনের আচরণ আমাকে প্রতিষোধে উদ্ভুদ্ধ করেছে। আর সহ্য হচ্ছিল না। মায়ের হুকুমে আমার সাথে যে আচরণ করেছে তা শুধু অসভ্যই নয়, বর্বর যুগকেও হার মানায়। শ্বাশুড়ি প্রথমে আমাকে পেটান তার পিঠ চুলকানোর কাঠি দিয়ে। এরপর স্বামীও মারধর করেন। সে সময় স্বামীর পরণে কোন কাপড় ছিল না। মায়ের নির্দেশে আমার স্বামী আমার ওড়না দিয়ে দুহাত পিঠমোড়া করে বাঁধে।
এরপর আমার সমস্ত কাপড় খুলে বিছানায় শুয়ায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মা তাকে নির্দেশ দ্যায় আমার সঙ্গে সঙ্গমের জন্য। তাহলে আরেকটি সন্তান হবে এবং ট্যাক্স রিটার্নের পরিমাণ বাড়বে এ কথাও বলে। সঙ্গমের আগে আমার যৌনাঙ্গে কাঠ পেন্সিল প্রবেশ করায়। মায়ের নির্দেশে আরেকটি রড ঢুকায় আমার মলদ্বারে। আমি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম। ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ, আমার আর্ত চিৎকার কখনই ঘরের বাইরে যাচ্ছিল না। অবুঝ সন্তানেরাও আমার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পাশেই। এরপর মায়ের কথা অনুযায়ী আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে সঙ্গম করে। আমি কষ্টে কাতরাচ্ছি, কোনই কর্ণপাত করে না।
এসব কথা আমি পুলিশকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, এসব করার পর আমাকে গোসলেরও সুযোগ দেয় নি। সাঈদ চৌধুরী গোসল করে খেয়ে দুপুরের কিছু পর কাজে যায়। যাবার আগে আরো পেটায় আমাকে। এরপর শুধু হয় শ্বাশুড়ির অত্যাচার। আমি কষ্টে, যন্ত্রণায়, লজ্জায় কাঁদছিলাম। সেদিকে সামান্য ভ্রুক্ষেপ না করে শ্বাশুড়ি আমাকে মারধর শুরু করেন। স্বামী টেলিফোনে আমাকে হুমকি দেন যে, চুপ না থাকলে কাজের পর ঘরে ফিরে এসে আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি কিছু না ভেবে সোজা ফোন করি ৯১১ তে। সেটি ছিল আমার প্রয়াত শ্বশুড়ের সেল ফোন- যা ফুডস্ট্যাম্পের গৃহীতা হিসেবে পেয়েছেন। দ্রুত চলে আসে পুলিশ। তারা সবকিছু দেখে ও জেনে এবং আলামত সহ শ্বাশুড়িকে গ্রেফতার করেন। দেশে আমার বাবা মাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্বামী ও শ্বাশুড়িকে ছাড়িয়ে না আনলে নাকি আমাকে শীঘ্রই মেরে ফেলা হবে।