‘জয় বাংলা’ শ্লোগানই বাচিয়ে দিল ফাসির আসামি ওলামালীগ নেতা মাহিবকে
ডেস্ক রিপোর্টঃ ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত তিন জনের জবানীতেই ওঠে এসেছিলো জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মাহিব হোসেন মাসুমের নাম। রিমান্ডে পুলিশের কাছে ও পরে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিন জনই শিশু আবু সাঈদকে হত্যা ও অপরহণের সাথে মাসুম জড়িত ছিলো বলে জানান।
তবে গতকাল (সোমবার) এই মামলার রায়ে বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) এবাদুর রহমান পুতুল, র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা ও সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম রাকিবকে হত্যার দায়ে একবার ও মুক্তপণ দাবির দায়ে আরেকবার মৃত্যুন্ডের আদেশ প্রদান করা হলেও মাহিব হোসেন মাসুমকে বেখসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাঈদের স্বজনরা।
গতকাল বিকেলে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এই মামলার অপর তিন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও মাসুমকে গ্রেফতারও করতে পারেনি পুলিশ। প্রথমদিকে মাসুম পলাতক থাকায় আটকে ছিলো বিচার কাজ। অভিযোগ গঠনের ঠিক পূর্ব মূহূর্তে আদালতে আত্মসমর্পন করে মাসুম। তার আত্মসমর্পনের পর ১৭ নভেম্বর ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
বিচার কাজ চলাকালীন সময়েও আদালত চত্বরে মাসুমকে বিভিন্ন সময় বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিষেদাগার করতে এমনিক ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতেও দেখা গেছে।
মাসুম খালাস পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবু সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পুতুল, গেদা ও রাকিব আদালতে নিজেদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাঈদ হত্যার সাথে মাসুম জড়িত ছিলো বলে স্বীকার করে। সবার জবানীতে নাম আসার পরও কিভাবে খালাস পায় মাসুম? সে কিভাবে খালাস পেয়ে গেলো তা আমাদের বোধগম্য হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা উচ্চ আদালতে আপীল করবো।
এ ব্যাপারে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মোশারফ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পুতুল, গেদা ও রাকিব অপহরণ ও হত্যাকান্ডের সাথে মাসুম জড়িত ছিলো বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মাসুমকে এজাহারভূক্ত আসামী করা হয়।
রায়ে মাসুমের খালাস পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। তবে আমার মনে হয়েছিলো, মাসুমেরও সাজা হবে।
সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি আব্দুল মালেক বলেন, অন্য তিন আসামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও ওলামা লীগ নেতা মাহিব হোসেন মাসুম স্বীকারোক্তি দেয়নি। তাছাড়া আমরাও তার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। তাই আদালত তাকে বেখসুর খালাস প্রদান করেছেন।
চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। এরপর ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।