বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পোন্নয়নের গুরুত্ব ছাড়া অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়
আইবিডব্লিউএফ সিলেটের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় কাজী হারুনুর রশিদ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও আইবিডব্লিউএফ-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল কাজী হারুনুর রশীদ বলেছেন, জাতীয় বাজেট হচ্ছে একটি দেশের জন্য এক বছরের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনার দলিল। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতি নির্ভর করে এই বাজেটের উপর। জনগণের কল্যাণে প্রণীত এই বাজেট জনগণের প্রকৃত আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে সরকারকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের অর্থনীতি গতিময়তা হারিয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি চরম অবণতিতে শিল্পোন্নয়নে নেমেছে স্থবিরতা। দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বার্থেই আসন্ন বাজেটে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া সময়ের অপরিহার্য দাবীতে পরিণত হয়েছে।
তিনি গতকাল বুধবার সিলেটের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘ইন্ডাষ্ট্রিয়ালিষ্টস এন্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ সিলেটের উদ্যোগে আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় সিলেটের বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সহ সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রকীব চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা রাখেন-বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেঃ কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক প্রফেসর এ.কে.এম মাহবুব জামান ও মো: আব্দুল হামিদ, আইবিডব্লিউএফ-এর কেন্দ্রীয় এসিস: সেক্রেটারী জেনারেল ডা: আনোয়ারুল আজিম, আইবিডব্লিউএফ সিলেটের সহ-সাধারণ সম্পাদক আলীমুল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক লায়েছ উদ্দিন, আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল, শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মহিউদ্দিন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল লতিফ, সাবেক সিটি কাউন্সিলর আব্দুস সামাদ নজরুল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা খলিলুর রহমান, আইবিডব্লিউএফ সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি রেজাউল করিম, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ফারুক আহমদ, আইবিডব্লিউএফ সিলেটের প্রচার সম্পাদক মিছবাহুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য কয়ছর জাহান চৌধুরী, মো: শাহজাহান আলী, মো: আব্দুল কাদির প্রমুখ। শুরুতেই কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ফাউন্ডেশনের সদস্য আনোয়ার হোসাইন। আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০১৪-১৫ কে সামনে রেখে কিছু প্রস্তাবনা রেখে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি যোবায়ের আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী হারুনুর রশিদ বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাইয়ের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে শক্ত ও সুস্থির ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে। এই ভিত্তি তৈরীর মূল নায়ক হচ্ছেন এদেশের সৃষ্টিশীল দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাগণ। অর্থনীতির এই ভিত্তিকে আরো মজবুত ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য টেকসই শিল্প কাঠামো নির্মাণে আসন্ন বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সিলেট বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় ও অগ্রসরমান এলাকা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সিলেটে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজনীতিকে ব্যবসা বান্ধব করতে চাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
সভায় বক্তারা বলেন, অপার সম্ভাবনার হাতছানি থাকা সত্ত্বেও সিলেটের বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। শিল্প উন্নয়নে নানা জটিলতার কারণে অর্থনৈতিক দিক থেকে সিলেট পিছিয়ে পড়ছে। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কৃষির প্রসারে বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বড় আকারের বাজেট পেশ করার চেয়ে ছোট আকারের বাজেট পেশ এবং এর বাস্তবায়ন জাতির জন্য মঙ্গলজনক। সর্বাধিক প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেটে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। দেশের মোট রেমিট্যান্স-এর সিংহভাগই আসে এই অঞ্চলের প্রবাসীদের আয় থেকে। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা বিরাট অংশ উৎপাদিত হয় সিলেট বিভাগে। স্থল বন্দর কেন্দ্রিক আমদানী-রফতানীর ক্ষেত্রেও এই বিভাগে অবস্থিত বন্দরগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভাগীয় ও মেট্রোপলিটন সিটি হিসেবে সিলেট মহানগরের গুরুত্ব দেশে ও বিদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই আসন্ন জাতীয় বাজেট প্রণয়নে এ অঞ্চলের জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলনের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্য সিলেটের সিভিল সোসাইটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সময়ের দাবী।