তিস্তার গর্ভে বিলীন ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গত দেড় মাস থেকে দফায় দফায় তিস্তার পানি কখনও বৃদ্ধি হচ্ছে, কখনও থৈ থৈ পানি, কখনও একেবারেই কম। এই দুই অবস্থায় নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। প্রতিদিনই বসতভিটে হারাচ্ছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের মানুষ। এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে চিলাখাল ফাজিল মাদ্রাসার ১২টি কক্ষ। বেশির ভাগ অংশ চলে গেছে চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিলাখাল এতিমখানা, পাইকান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যেকোনো মুহূর্তে এতিমখানা, একটি মসজিদ ও মুক্তিযোদ্ধা পীরের মাজার রাক্ষসি তিস্তার গর্ভে চলে যাবে।
স্থানীয়রা জানান, আপদকালীনভাবে স্পার, জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কোনো উপকারই আসছে না তাদের। তারা বলছেন পানি এলেই কেবল পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের দেখা মেলে। নামমাত্র কয়েকটি বস্তা ফেলে দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ। এতে করে দুর্ভোগ থেকে যায় আগের মতোই।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গেল বছর তিস্তার গর্ভে চলে গেলে ওই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ইউসিুফ আলীর বসতভিটে। যাবার পথে তার মাজরাটিও। এ কারণে প্রতি বছর যে ওরস হতো তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা তীরবর্তী রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে পানিপন্দী হয়ে পড়েছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানা রোগে শোকে ভুগছেন এই মানুষগুলো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে ওই এলাকায় ভয়ে যেতে পারছি না। বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে।
এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ করা করে জানা্ন, ৩০ হাজার পানিবন্দী মানুষের জন্য মাত্র পাঁচ মেট্রিক টন খাদ্য আর ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই পরিমাণ খাদ্য নিয়ে কিভাবে ওই পানিবন্দী মানুষের কাছে যাই। ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করছি তাদের পাশে দাঁড়াতে।
চিলাখাল জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৫ সালে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটি করেছি। কিন্তু মেষ চিহ্নটুকু থাকছে না। তিনি এই বিদ্যালয়টি রক্ষার দাবি করেন।
চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, আমরা ভীষণ টেনশনে থাকি ছেলে মেয়েদের নিয়ে। না জানি কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ স্কুলের বারান্দা পর্যন্ত নদীগর্ভে চলে গেছে। একই কথা বলেন, পাইকান জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পাইকান ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা ভয়ে ভয়ে স্কুলে আসেন। কখনও বাবা মায়ের হাত ধরে স্কুলে আসে। পড়ালেখা খুব একটা হয় না।
পড়ালেখা হয় না শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলেন, নদীর যে ভয়াবহ ভাঙন তাতে ছেলে মেয়ের রক্ষা করি না স্কুলে ক্লাস নেই।
গংগাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু জানান, একটি মাত্র গ্রোয়েন বাঁধের অভাবে ভাঙনের এই ভয়াবহতা; বাঁধ দিলেই এই ভাঙন রক্ষা করা সম্ভব। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠান চারটির ভাঙনের কথা স্বীকার করে বলেন, জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন করা করার চেষ্টা চলছে।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানান, তিস্তার পানি এখন ডেঞ্জার পয়েন্টে আছে। এ অবস্থায় থাকলে বা আরেকটু পানি বৃদ্ধি হলে প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, আপাতত প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষার জন্য সাময়িকভাবে কাজ করা হয়েছে।