নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে যেয়ে উলটো ফেসে গেলেন সাংবাদিক প্রবীর
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাওয়ায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে উলটো মামলার জালে জড়াতে হলো। ডায়েরি করেনি পুলিশ তাই তাঁর জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্যে দায়ি থাকবেন এলজিআরডি মন্ত্রী, মুসা বিন শমসের ও বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নাম উল্লেখ করে কিছু দিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ফরিদপুরে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ ফরিদপুরের সংসদ সদস্য।
প্রবীর সিকদারের ছেলে সুপ্রিয় শিকদার অভিযোগ করেছেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে স্বপন পাল নামক এক আইনজীবিকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। মন্ত্রী প্রবীর সিকদারকে অকথ্য ভাষায় গালগালও করেছেন বলে জানান তাঁর ছেলে।
প্রবীর সিকদারের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, রবিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় শেরে বাংলা নগর থানার এসআই জলিলের নেতৃত্বে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে অবস্থিত “উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ” কার্যালয় থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, “প্রবীর সিকদারকে কোনো কারণে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
“তিনি তার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং পুলিশ তাকে সহায়তা করছে না এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডেকে আনা হয়েছে। পুলিশ তার কাছে জানতে চাইছে, কী কারণে তার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
তিনি ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্ততা এবং বাচ্চু রাজাকারকে নিয়ে অনেকগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন। লেখালেখির কারণে ২০০১ সালে আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি পা হারাতে হয় প্রবীর সিকদারকে।
এছাড়াও তিনি ফরিদপুরে এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর দখলের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছিলেন, যে অভিযোগটি প্রথমে করেছিল বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ। তাঁর এ লেখালেখির পর মন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন- হিন্দু ঐ পরিবারটি ভারত চলে গেছে। এর বাইরেও প্রবীর সিকদার সাম্প্রতিক সময়ে এমজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ের নির্যাতন নিপিড়নের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছিলেন। নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিতও ছিলেন প্রবীর সিকদার। গত ১০ আগস্ট এ নিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন-
“আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন :
১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি
২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের
৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তখন হামলার পর মামলায় মুসাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রবীর, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।