রাজন হত্যাকান্ডের ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন
মুখ খুলতে নারাজ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে নির্মম পৈশাচিক নির্যাতনে খুন হওয়া শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবার সাথে থানা কম্পাউন্ডে দুর্ব্যবহার ও আসামি কামরুল ইসলামসহ অন্য আসামিদেরকে ‘উৎকোচে’র বিনিময়ে রক্ষার চেষ্টার অভিযোগে জালালাবাদ থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসানের কাছে জমাও দেয়া হয়। তবে ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে কি উল্লেখ করা হয়েছে সে ব্যাপারে মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি অনেক বড়। ৪২৪ পাতার প্রতিবেদনটি গতকাল পর্যন্ত পুরোপুরি পড়া হয়নি। তাই তিনি গতকাল বিস্তারিত কিছু না বলে জানান, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ার পর পরবর্তীতে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।’
এমন পরিস্থিতিতে আলোচিত হত্যাকান্ড শিশু রাজন হত্যার ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে কি উল্লেখ করা হয়েছে তা গতকাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজন হত্যা মামলার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন প্রতিবেদনটি জমা দেন।
এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর দোষী পুলিশদের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জালালাবাদ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জাকির হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ কমিশনার ওসি আলমগীরকে বরখাস্ত করার জন্য পুলিশ হেডকোয়াটারে সুপারিশ পাটিয়েছেন।’
পুলিশ কমিশনারের কাছে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম ও উত্তর) মো. রহমত উল্লাহ জানান, ‘৪২৪ পাতার এ প্রতিবেদনকে কি উল্লেখ করা হয়েছে তা জানা নেই। তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হের্ডকোয়াটারে পাঠানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, কমিশনার স্যার প্রতিবেদন পড়ার পর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশরার উত্তর অফিসকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিদর্শক (ওসি) পর্যায়ে যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সরাসরি কমিশনার স্যার করে থাকেন। আর উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) পর্যায়ে কমিশনার স্যারের নির্দেশে উপ-পুলিশ কমিশনাররা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
সূত্রমতে, নির্মম পৈশাচিক নির্যাতনে খুন হওয়া শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবার সাথে থানা কম্পাউন্ডে পুলিশ সদস্যদের দুর্ব্যবহার ও আসামি কামরুল ইসলামসহ অন্য আসামিদেরকে ‘উৎকোচে’র বিনিময়ে রক্ষার চেষ্টার অভিযোগ ওঠলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় কমিটি তদন্তের মেয়াদ আরও ৫ দিন বর্ধিত করেন। ২য় দফা সময় বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার রাতেই তারা মহানগর পুলিশে কমিশনার বরাবরে ৪২৪ পাতার চড়িান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
আর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিতে অপর ২ সদস্য করা হয় উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোশফেকুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর দক্ষিণ) জেদান আল মুসাকে। প্রথমে কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলেও ১৭ জুলাই কমিটির মেয়াদ আরো ৫ দিন বাড়ানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই ১৩ বছরের শিশু রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে মামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে হত্যার ভিডিও চিত্র ছেড়ে দেয় ঘাতকরা। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে শিশু রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমানের সঙে দুর্ব্যবহার করেন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে ‘উৎকোচে’র বিনিময়ে দেশ ত্যাগের পাশাপাশি স্পর্শকাতর এ ঘটনার পরপরই দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ওঠে, ওইদিন রাতে রাজনের বাবা আজিজুল ইসলাম জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন ও এসআই আমিনুল ইসলাম তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে এসআই আমিনুল তাকে গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। পরে পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা মিলে ফোনে রাজনের খুনিদের সাথে ফোনেও কথা বলেন।
রাজনের পরিবারের অভিযোগ ওসি আলমগীর ও এসআই আমিনুল মিলে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে রাজনের প্রধান ঘাতক কামরুলকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। পুলিশের এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর এসআই আমিনুল ইসলামকে জালালাবাদ থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। তবে তদন্তকালে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে কেউই বিস্তারিত বরতে রাজি না হলেও পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে প্রত্যাহার, থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জাকির হোসেন, এসআই আমিনুল ইসলামকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়।