আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয় : ভোটের মাধ্যমে অপমানের প্রতিশোধ নিন
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে অপমান করছে, তারা নিজেদের ছাড়া বাকিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করে- এমন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে অপমানের প্রতিশোধ নিতে বলেছেন।
রোববার দুপুর ২টায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান বেগম জিয়া। টানা তিন মাসের বেশি সময় গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে ওই কার্যালয় ছাড়ার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করলেন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঢাকাবাসীকে বলবো, আপনারা দেখছেন, ক্ষমতার দম্ভে আমার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। আমার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশকে ভালোবেসে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। অল্প কিছুদিন আগে আমি আমার আদরের ছোট ছেলেটিকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি। আমার একমাত্র জীবিত সন্তানটি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দূরদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জীবনের এই প্রান্তে এসে প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বজনহীন পরিবেশে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখনো আমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমতো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এখন আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আত্মীয়। আমার সকল তৎপরতা আপনাদেরকেই ঘিরে। তাই সব অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিকার ও উপযুক্ত জবাব দেয়ার ভার আজ আমি আপনাদের উপরেই অর্পণ করলাম। আমার প্রাণনাশের জন্য উপর্যুপরি হামলার ঘটনায় দেশবাসী ও বিদেশি বন্ধুরা যারা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন আমি তাদের সকলের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু ধারাবাহিক এসব হামলা ও নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়া দূরে থাকুক; টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে এই নগরীতে ক’দিন জনসংযোগে নেমে জনগণের যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখেছি, তাতে আমি অভিভূত। মানুষ উদ্বেলিত। পরিবর্তন কামনায় অধীর। আমি যেদিকেই গিয়েছি, বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো মানুষ নেমে এসেছে উচ্ছ্বসিত হয়ে, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে। এই গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। আমার হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেই, কামান-বন্দুক নেই। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার নেই। কোনো বাহিনী নেই। সশস্ত্র সন্ত্রাসী নেই। আমার আছে শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা আর দেশবাসীর সমর্থন ও দোয়া। এর ওপর নির্ভর করেই আমি রাজপথে নেমেছি। জনগণের কাছে যাচ্ছি। এতে এতো ভয় পাবার কী আছে? কিন্তু তারা ভয় পেয়েছে। এতোদিন তারা প্রচার করতো যে, আমি নাকি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের কোনো জনসমর্থন নেই। কিন্তু আমি জনসংযোগে নামতেই যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে, তাতে তাদের এতো দিনকার সব প্রচারণা মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন।’
সিটি করপোরেশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা জানেন, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন চলাকালে আকস্মিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। নির্বাচনটি নির্দলীয় ভিত্তিতে হবার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ৩ সিটিতে তার মনোনীত মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। তারা হয়তো ভেবেছিলেন, তাদের সর্বব্যাপী আক্রমণে পর্যুদস্ত বিএনপি সিটি নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু আমরা সিনিয়র সিটিজেন ও পেশাজীবীদের মনোনীত প্রার্থীদের ৩টি সিটি কর্পোরেশনে সমর্থন দিয়ে এই নির্বাচনে যুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নিই। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই সরকারের অধীনে যারা ভোটারবিহীন নির্বাচনী প্রহসনে রাষ্ট্রক্ষমতা কবজা করেছে। এই নির্বাচন হচ্ছে, চরম পক্ষপাতদুষ্ট ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে রয়েছে চরমভাবে দলীয়করণ করা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাজেই এ নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে সে-সন্দেহ দেশবাসীর মতো আমাদেরও ছিল এবং আছে। তা সত্বেও আমরা কয়েকটি কারণে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
১. আমরা শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি করেছি। স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের ওই দাবি নেই।
২. দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট অংশ নিয়েছে। সবগুলো সিটিতে আমরা বিপুল ভোটে জিতেছি। উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে প্রথম পর্বেও আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়লাভ করে।
এই পরিস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারচুপি করে অনেক জায়গায় আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়। তবে জনগণের বিপুল সমর্থন যে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতি রয়েছে তা সবগুলো নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৩. সভা-সমাবেশসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনগণের কাছে যাবার সুযোগ আমাদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সীমিত আকারে হলেও সে সুযোগ আমরা নিতে চেয়েছি।
৪. একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সকল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থায় আমরা বিশ্বাস করি। তাই আমরা নির্বাচনমুখি একটি দল হিসেবে প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্বের জায়গায় জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছি।
৫. একদলীয় শাসন থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আমরাই সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করি। জনগণের সরাসরি ভোটে সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচনের ব্যবস্থাও আমরাই করি। যে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকাটাই বিএনপি যুক্তিসঙ্গত মনে করেছে।
৬. সর্বোপরি, জনগণের ওপর আমাদের রয়েছে অটুট আস্থা। আমরা মনে করি, দেশের মানুষ সুযোগ পেলেই আমাদের সমর্থন করবে এবং আমাদের সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।
৭. এই নির্বাচনকে আমরা সরকার, শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি টেস্ট কেস হিসাবেও নিয়েছি। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হবে না। এমন একটি নির্বাচনেও যদি তারা যথাযথ আচরণ না করে, যদি সব পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি না করে, যদি নিরাপদ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারে এবং যদি সন্ত্রাস, ডাকাতি, কারচুপির মাধ্যমে তারা জনগণের রায়কে বদলে ফেলে, তাহলে সকলের কাছে আবারো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে যে, এদের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবান্তর।’
খালেদা জিয়া তার দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আপনারা যা দেখছেন তাতে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই টেস্ট কেসে সরকার, ক্ষমতাসীন দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শোচনীয়ভাবে ফেইল করে চলেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে। এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ পরিবেশে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদান নিশ্চিত করতে আমরা নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনীর পর্যাপ্ত পরিমাণ সদস্য মোতায়েনের দাবি করেছিলাম। যাতে ভোট দেয়া, ভোট গণনা, ফল প্রকাশ এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ের সম্ভাব্য সহিংসতাও রোধ করা যায়। কারণ, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর সকলের আস্থা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে সাহসিকতার সঙ্গে পালনের ব্যাপারে এই বাহিনী গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য স্থাপন করেছে। নিজের দেশেও তারা সফলভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও করতে পারবেন বলে আমরা মনে করি।’
সেনা মোতায়েনেরে বিষয়ে বেগম জিয়া বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে তাদের ভোট ডাকাতির পরিকল্পনার দোসর হয়ে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের কথা বলে এক ধূর্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা প্রথমে বলেছিল, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনের সময়ে ও আগে-পরে মোট চার দিন নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েন থাকবে। পরে তারা তাদের চিঠি বদল করে নতুন সংশোধিত চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সেনা ছাউনিতেই থাকবেন রির্জাভ ফোর্স হিসাবে। রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে ডাকলেই কেবল তারা কোথাও যেতে পারবেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কাজ করবেন। এটা অর্থহীন এবং পুরোই প্রতারণামূলক। সশস্ত্রবাহিনীর ওপর যে তাদের কোনো আস্থা নেই এতে তা আবার প্রমাণিত হলো। প্রমাণিত হলো যে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে ফেলার এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর যে পরিকল্পনা এঁটেছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে তারা বাধা বলে মনে করছে। আর ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস ও কারচুপির পরিকল্পনায় সহায়তা দিতেই নির্বাচন কমিশন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বিচারিক ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনীকে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে ভোটের দিন এবং আগে-পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েন করতে আবারো দাবি জানাচ্ছি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন দাবি করেন, ‘ক্ষমতাসীনদের ভোটার ভীতি ও পরাজয়ের আলামত সব দিক দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই তারা আমাদের প্রচার কাজে বাধা দিচ্ছে ও হামলা চালাচ্ছে। ভোটাররা যাতে ভয় পেয়ে ভোটকেন্দ্রে না যায় তেমন ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতেই তারা সর্বমুখী সন্ত্রাস চালাচ্ছে। নজীরবিহীনভাবে পুলিশ বাহিনীকে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অবস্থা যাচাইয়ে সরেজমিনে জরিপের কাজে নামিয়েছে। বিরোধী প্রার্থী ও ভোটারদের হয়রানির দায়িত্বও পুলিশকে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মন্ত্রী-এমপিরা সরকার সমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নামতে বাধ্য করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা অবাধে টাকা ছড়াচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও বস্তি এলাকায় গরিব মানুষের ভোট কেনার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা সন্ত্রাস ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে লড়ে যেতে চাই। কারণ, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ একটুখানি সুযোগ পেলেই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে এসব অপতৎপরতা ও অত্যাচারের বদলা নেবে, উপযুক্ত জবাব দেবে।’
নীরব প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই ক্ষমতাসীনেরা গত ৫ জানুয়ারি আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাননি। তবু শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে মিথ্যা হিসাব দিয়ে আপনাদের অপমান করেছে। ভোট ছাড়াই এরা জনগণের ভুয়া প্রতিনিধি সেজেছে। এদের ভোট চাওয়ার কোনো অধিকার নেই। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আমি ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে আগামী ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার নীরব প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিরাট শক্তি। ভোট হচ্ছে জনগণের এক বিরাট ক্ষমতা। সঠিকভাবে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। নীরব বিপ্লব ঘটান। আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। মা-বোন, মুরুব্বী, তরুণসহ সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার ভোটার সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাবেন। লাইন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবেন। অনিয়ম ও কারচুপি দেখলে সবাই মিলে প্রতিবাদ করবেন। মনে রাখবেন, দেশের সম্পদ লুটপাট করে এবং আপনাদের রক্ত শুষে এরা টাকার পাহাড় গড়েছে। কাজেই এরা যে টাকা বিলাচ্ছে, সেটা আপনাদেরই টাকা। ওদের কাছ থেকে এ টাকা নিলেও ভোট বিক্রি করবেন না। টাকা নেবেন কিন্তু বিবেক অনুযায়ী ভোট দেবেন। কারণ, ভোট বিক্রি আর ঈমান বিক্রি একই কথা।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরেরা যেভাবে উগ্র-সন্ত্রাসী ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছে কোনোভাবে এই তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল কেড়ে নিতে পারলে তারা আপনাদের আর মানুষ বলেই গণ্য করবে না। জোর করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে গেলে মা-বোনেরা নিরাপদে থাকতে পারবেন না। ব্যবসায়ীরা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারবেন না। প্রবীণ ও সম্মানিত নাগরিকদের সম্মান থাকবে না। তরুণদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা আরো বিপথগামী হবে। শিক্ষাঙ্গণ আরো কলুষিত ও সন্ত্রাস কবলিত হবে। তাই এবার নিজেদের স্বার্থেই বুঝে-শুনে ভোট দিতে হবে এবং ভোটের ফল বুঝে নিতে হবে। আমি নগরবাসীর প্রতি আবেদন করছি, আপনারা দয়া করে ঢাকা দক্ষিণে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী মীর্জা আব্বাসকে মগ মার্কায়, ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায় এবং চট্টগ্রামে মনজুর আলমকে কমলালেবু মার্কায় ভোট দিন। কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর পদেও আমাদের সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিন। আপনার ভোট হোক অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভোট। আপনারা ভোট হোক বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, উন্নত, আধুনিক, যানজটমুক্ত, পরিকল্পিত ও নিরাপদ নগরী গড়ার পক্ষের ভোট। আমরা নবীন ও প্রবীণ এবং অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয় করে প্রার্থী বাছাই করেছি। আমরা মিথ্যা ও অসম্ভব প্রতিশ্রুতি দেয়ার পক্ষে নই।’