কালবৈশাখী ঝড়ে ৫শ ঘর বিধ্বস্ত, আহত ৪
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে কালবৈশাখী ঝড়ে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত পাঁচশ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে মেঘনায় মাছ শিকারী একটি জেলে নৌকা নদীতে ডুবে যায়।
বুধবার দুপুরে বয়ে যাওয়া এ ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন ফসলের। গাছ-পালা উপড়ে সঞ্চালন লাইন ছিড়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে কালবৈশাখী ঝড় হঠাৎ করে উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন, পাটারীরহাট ও চরকাদিরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এতে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তিনটি মসজিদ, বসত ও দোকানঘরসহ প্রায় পাঁচশ ঘর বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে যায় অসংখ্য গাছপালা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন ফসল। এ সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে উপজেলার চরঠিকা এলাকায় দুই ব্যক্তি আহত হন। তাদের মধ্যে আজগর হোসেন নামে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান মাস্টার বাংলামেইলকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মেঘনা তীরবর্তী তার এলাকার আক্তার হোসেন, নুর উদ্দিন ও বশির উল্যার কাঁচা বসতঘরসহ অন্তত ২০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই সময় লুধুয়া মাছঘাটের ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন ভুট্টোসহ তিন ব্যবসায়ীর দোকানঘর বিধ্বস্ত হয় বলে তিনি জানান।
লুধুয়া মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো. সোহেল জানান, মেঘনা নদীতে মাছ শিকারের সময় ঝড়ের কবলে পড়ে মোহাম্মদ মাঝীর মাছধরার নৌকা নদীতে ডুবে যায়। নৌকায় থাকা দুই জেলে পরে সাঁতরে তীরে ওঠেন।
উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছায়েফ উল্যাহ জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে তার ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্র, ভূমি অফিস, বাতিরঘাট জামে মসজিদ, গুচ্ছগ্রাম জামে মসজিদ, গুচ্ছগ্রাম মহিউদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসলাম বেপারী ফোরকানিয়া মাদরাসা বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে তার ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং শতাধিক বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
চরজগবন্ধু কাদির পন্ডিতেরহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুরনবী জানান, ঝড়ে তার প্রতিষ্ঠানের একটি টিনসেড ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের জানান, কালবেশাখীর ছোবলে তার ইউনিয়নের মধ্য চরজগন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া ১০টি বসতঘর সম্পূর্ণ এবং ৫০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্তসহ অসংখ্য গাছ-পালা উপড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশ্রাফ উদ্দিন রাজু জানান, ঝড়ে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। আকস্মিক এ ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের কমলনগর সাব সেন্টারের ইনচার্জ শরীয়ত উল্যাহ বাংলামেইলকে জানান, ঝড়ো-হাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সঞ্চালন লাইন ছিড়ে যাওয়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করতে দু’একদিন সময় লাগবে। তারপর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল হক ফারুক রেজা বাংলামেইলকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা তিনি পরিদর্শন করছেন।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হবে।’