সাঈদ হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিল ঘাতক রাকিব ও এবাদুর
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নগরীর রায়নগর দর্জিবন্ধ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আবদুল মতিনের ছেলে ও শাহী ঈদগাহস্থ হযরত শাহ মীর (রহ.) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ করার পরিকল্পনা ও হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক আবদুর রাকিব ও এবাদুল। আবদুর রাকিব জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এবাদুর বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল।
গত বুধবার আবু সাঈদকে অপহরণ করা হয়। শনিবার রাতে এসএমপির বিমান বন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমানের ৩৭ কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড়ের বাসা থেকে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিমাবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাকিব ও র্যাবের সোর্স আতাউর রহমান গেদাকে আটক করে পুলিশ। গতকাল রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় কনস্টেবল এবাদুর এবং সোমবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ওলামালীগ নেতা রাকিব।
ওলামালীগ নেতা রকিবের জবানবন্দীঃ জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাকিব সোমবার মহানগর হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ফারহানা ইয়াসমিনের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দির বরাত দিয়ে কোতোয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়াজ আহমদ জানান, হত্যাকান্ডের আগের দিন ১০ মার্চ সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের ‘ভোজনবাড়ি’ রেস্টুরেন্টে বসে শিশু সাঈদকে অপহরণের পরিকল্পনা হয়। ওইদিন বৈঠকে গ্রেফতারকৃত ৩ জন ছাড়াও জেলা ওলামালীগের প্রচার সম্পাদক মুহিবুল ইসলামসহ আরেক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সাঈদের মামা প্রবাসী ও বিত্তবান হওয়ায় অপহরণের টার্গেট নেয় তারা। পরে পরিকল্পনা মাফিক ১১ মার্চ বুধবার সাঈদকে অপহরণ করা হয়।
কনস্টেবল এবাদুরের জবানবন্দীঃ একই আদালতে গতকাল রবিবার দেয়া জবানবন্দিতে বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর বলে, গত বুধবার দুপুরের দিকে শিশু আবু সাঈদকে তার বাসায় নিয়ে আসে ‘র্যাবের সোর্স’ গেদা মিয়া, জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম। সাঈদ পূর্ব পরিচিত ও তার বাবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবির ব্যাপারে প্রথমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগেন তিনি।
এসময় রাকিব, গেদা ও মুহিবুল তাকে বলে সাঈদকে আটকে রাখা গেলে মোটা অংকের টাকা মিলবে। টাকার লোভে পড়ে চারজন মিলে সাঈদের মুখ বেঁধে বাসার চিলেকোঠায় আটকে রাখে। এবাদুর আরও জানায়- মুক্তিপণের জন্য নতুন সিম কিনে সাঈদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে গেদা। গ্রেফতার এড়াতে তারা সিলেট থেকে জৈন্তাপুর গিয়ে মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ দাবি করেন। ওইদিন বিকেলে সিলেট ফিরে এসে তারা সাঈদকে ছেড়ে দেয়ার মনস্থির করে। কিন্তু এতে বাধ সাধে গেদা। সাঈদ যেহেতু সবাইকে চিনে ফেলেছে তাই তাকে ছেড়ে দিলে বিপদ হবে এটা বলে বাধা দেয় গেদা। পরে রাতে চারজন মিলে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে সাঈদকে। হত্যাকান্ডের পর লাশ গুম করার জন্য দুইটি বস্তায় ভরে রাখা হয়। হত্যাকান্ডের পরদিন মুক্তিপণের জন্য গেদা আবারও সাঈদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু এরই মধ্যে পুলিশী তৎপরতা শুরু হওয়ায় লাশ গুম বা মুক্তিপণ আদায় কোনটাই সম্ভব হয়নি।