সিলেটে উত্তাপবিহীন হরতাল : মাঠ ছাড়া জামায়াত-শিবির : রাজপথে আ’লীগ-পুলিশ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রতিবাদে সিলেটে জামায়াতের ডাকা টানা ২ দিনের হরতালের ১ম দিন সিলেটে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। তবে পুরোদিনই রাজপথ দখলে রেখেছেন পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। গতকাল হরতালের শুরুতেই নগরীতে একটি ঝটিকা মিছিল করেছে শিবির। এছাড়া নগরীর দু’একটি এলাকায় মিছিল ও পিকেটিংয়ের চেস্টা এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে নগরীর শেখঘাট এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিাছল বের করে। পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত শিবির কর্মীরা। এ সময় কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় শিবিরকর্মীরা। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের শিবিরকে ধাওয়া করলে তাদের ত্রিপক্ষীয় সংর্ঘষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে জামায়াত শিবির কর্মীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল দু’জনকে আটক করে পুলিশ। পরে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জালালাবাদ থানার ধনপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে জামায়াত শিবিরের ৫ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
অপরদিকে, সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কারণে সিলেটের পরিবহন ব্যবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। বন্ধ ছিল স্বাভাবিক যান চলাচল। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিক্সা চললে ও তা সংখ্যায় ছিল অনেক কম। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দুরপাল্লার কোন বাস। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সিলেট রেলস্টেশন থেকে র্নির্ধারিত ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সময় মত। তবে হরতালের কারণে বাসের যাত্রীরাও ভিড় জমায় রেলস্টেশনে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, হরতালের সমর্থনে সিলেট নগরীর শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্ট এলাকা থেকে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির কর্মীরা। এসময় তারা রাস্তা ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বন্দরবাজার থেকে ছাত্রলীগের নাসির গ্রুপের একটি মিছিল ওই এলাকা অতিক্রম করছিল। ছ্ত্রালীগ কর্মীদের ধাওয়ায় শিবির কর্মীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করার সময সংর্ঘষ বাঁধে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে তাদের ধাওয়া করলে শিবির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে শিবির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পালানোর সময় শিবির নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে শেখঘাট ‘শুভেচ্ছ’ ৩৪৮ নম্বর বাসা থেকে শিবির সন্দেহে আশরাফ আহমদ ও নূরুল ইসলাম নামের তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী হরতালের সমর্থনে ঝাটিকা মিছিল করে। মিছিল শেষে তারা রাস্তায় ইট ফেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা সটকে পড়ে। এছাড়া গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
সকাল পৌনে ১০টায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সদর উপজেলার বলাউরা জাঙ্গাইল এলাকায় ৪টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও একটি ট্রাক ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা।
এছাড়া নগরীর শাহপরাণ ও মিরাবাজার এলাকায়ও মিছিল করেছে ছাত্রশিবির। তবে ঝাটিকা মিছিল,গাড়ী ভাংচুর, হাত বোমার বিস্ফোরণ, সংর্ঘষ ছাড়া নগরীর কোথাও কোনো বড় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ভোর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। নগরীর কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো যানবাহন। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, সবধরণের নাশকতা এড়াতে সিলেট নগরজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোর থেকেই নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে তাদের টহল দিতে দেখা যায়। মাঠে রয়েছে বিজিবিও। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হরতালে পিকেটিংকালে সদর উপজেলার বলাউরা, ধনপুর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে দুই সহোদর, বাবা-ছেলে ও প্রবাসীসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হচ্ছে-ধনপুর গ্রামের খলিল আহমদের দুই ছেলে জাবেদ হোসেন (২০) ও মমিন মিয়া (২৪), একই এলাকার মনির মিয়া ছেলে সৌদি প্রবাসী কুদ্দুস মিয়া(৩০) এবং জুগিরগাঁও গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর ছেলে ইন্তাজ মিয়া (৪০) এবং তার ছেলে সাদ্দাম আহমদ (১৮)। কুদ্দুস মিয়া ছাড়া বাকি সবাই মুদির দোকানী বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে সকাল ১১টায় সিলেট রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে অবস্থান নিয়েছে বিপুল সংখ্যক যাত্রী। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেকেই পড়েন বিপাকে।
কানাইঘাটের ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম ব্যবসায়িক কাজে জরুরী ভিত্তিতে চট্রগ্রামে যাবেন। হরতালের কারণে বাস না পেয়ে ট্রেনে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশনে আসেন। তবে চট্রগ্রাম গামী বুধবারের সকল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েন। তবুও কোনোভাবে ট্রেনে চড়ে চট্রগ্রামে যাওয়া যায় কিনা এ আশায় সকাল ৭টা থেকে বসে আছেন। এভাবে শত শত যাত্রীকে সিলেট রেলস্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে দেখা যায়।
হরতালে যানবাহন স্বল্পতার কারণে নগরীর অফিসগামী মানুষ ও পড়েন বিপাকে। রাস্তায় রিকশা চলাচল করেছে। তবে তা ছিল অল্প সংখ্যক। তাই হেঁটেই অনেককে অফিসে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে হরতালে সবধরনের নাশকতা এড়াতে নগরীতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নগরজুড়ে তাদের টহল অব্যাহত আছে।
এসএমপি‘র এডিসি উত্তর (মিডিয়া) রহমতুল্লাহ জানান,শেখঘাটের সংর্ঘষের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে,নগরীর জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত পাচঁজনকে হরতাল উপলক্ষে আটক করা হয়েছে। সন্ধ্যায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দোষী না হলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এলাকায় বিশৃংখলা যাতে না সৃষ্টি হয় এজন্য তাদের আটক করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।