সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ ৩২টি ভবন বৃহস্পতিবার অপসারণ হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার::সিলেট নগরীর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ ভবন ভাঙার জন্য দুই বছর ধরে একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেয়ার পরও কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় এবার ওই ভবনগুলো অপসারণ কার্যক্রম আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করতে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, নগরের তাতীপাড়াস্থ ৯ নম্বর ঝুঁকিপূর্ণ চারতলা বাসাটি বৃহস্পতিবার অপসারণ কাজ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভবনের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, সিটি কর্তৃপক্ষ ভবনগুলো অপসারণ শুরু করলেও নগর ইমারত আইনানুযায়ী ভবন ভাঙার খরচ সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে আদায় করা হবে।
সিসিকের তালিকাভূক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৩২টি ভবন হচ্ছে, কালেক্টরেট ভবন-৩, জেল রোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, জিন্দাবাজারস্থ কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসএ রেকর্ড অফিস, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারস্থ রহমান প্লাজা ও মিতালী ম্যানশন, মিরাবাজারস্থ সিলেট মডেল স্কুল ও কলেজ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কারিগরি ইনস্টিটিউট, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মদিনা মার্কেটের পেছনের কয়েকটি বাসা (তালিকা বাসার নম্বর বা সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি), দরগাহ গেইটে আজমীর হোটেল ও মাহমুদ কমপ্লেক্সের পেছনের বাসা, শেখঘাট পুরাতন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন বাসা, মদনমোহন কলেজের নবনির্মিত ভবন।
মধুবন মার্কেট, পূর্ব শাহী ঈদগাহস্থ অনামিকা এ/৭০(খান কুঞ্জ), ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, বন্দরবাজারের সিটি সুপার মার্কেট, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর বাসা, চৌকিদেখির ৫১/১ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ, জিন্দাবাজারস্থ রাজা ম্যানশন, ভাতালিয়ার ১১৮-সীমানা দেওয়াল, পুরান লেনের শফিকুল হকের ৪/এ কিবরিয়া লজ, দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলায় সিদ্দিক আলীর বাবর ট্রাভেল্স, খারপাড়ায় মিতালী-৭৪ নম্বর বাসা ও তাতীপাড়া- ৯। এরই মধ্যে পুরানলেনের একটি বাসা ভেঙে ফেলা হয়েছে মাস দুয়েক আগে।
এদিকে, কাছাকাছি কয়েকটি বিচ্যুতি (ফল্ট লাইন) থাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। সাম্প্রতিক ঘনঘন কয়েকটি ভূমিকম্পের কারণে বেড়েছে আতঙ্কও। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেয় সিসিক।
সিসিক সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা সিলেট নগরীর ৩২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ ভবনগুলো খালি করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার নোটিশ দেয়া হলেও মালিকরা তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতেই লোকজন বসবাস করছেন। যেসব সরকারি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল তাতেও চলছে দাপ্তরিক কাজ।
গত ১৩ এপ্রিল বুধবার সিলেটসহ সারাদেশে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর সিসিক কর্তৃপক্ষ আবারো নড়েচড়ে বসেন। নতুন করে শুরু হয় নোটিশ জারি। খালি করার নির্দেশ দেয়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভবন খালি করা না হলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ভেঙে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত রোববার সিলেট নগরীর তাঁতীপাড়াস্থ চারতলা একটি ভবন মালিককে তার ঝুঁকিপূর্ণ বাসাটি খালি করার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ পাঠায় সিসিক। তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বাসার মালিককে জানানো হয়েছে স্বেচ্ছায় তিনি বাসা খালি না করলে বৃহস্পতিবার সিটি কর্পোরেশন বাসাটি ভেঙে ফেলবে। এর আগেও একাধিকবার ওই ভবন মালিককে নোটিশ দেয়া হলে তিনি বাসা খালি করেননি।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও মার্কেট খালি করার নোটিশ দেয়া হয়েছে। ওই মার্কেটে প্রায় ৩৫০টি দোকান রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কেট খালি করে অন্যত্র সরে যেতে সিসিকের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরে না গেলে সিটি কর্পোরেশন ‘অ্যাকশনে’ যাবে বলে নগরভবন সূত্র জানিয়েছে। এ দুইটি স্থাপনা ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আরো কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিকদের নোটিশ করা হয়েছে। তাদেরকেও স্থাপনাগুলো খালি করতে সময় বেধে দেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নগরীর ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাসা-বাড়ি ছাড়াও রয়েছে কালেক্টরেট ভবন-৩, এসএ রেকর্ড রুম, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসসহ কয়েকটি সরকারি ভবন। বারবার নোটিশ দেয়ার পরও সংশ্লিষ্টরা ভবনগুলো খালি না করায় এবার সিটি কর্পোরেশন কঠোর হচ্ছে।