কিশোরীকে উদ্ধার, কুলাউড়ায় মাকে হত্যার পর মেয়েকে অপহরণ রহস্যাবৃত
ডেস্ক রিপোর্টঃ জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরাইছড়ায় দুর্বৃত্ত কর্তৃক মাকে হত্যা করে অপহরণকৃত রুমেনা বেগমকে (১৭) অবশেষে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিশোরী রুমেনাকে উদ্ধার করা হলেও তার মা ছায়রা বেগমকে হত্যার মূল ঘটনা এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে রোববার ভোরে অপহরণকৃত রুমেনা বেগ ও মুসিক মিয়াকে তার বন্ধুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক মুসিক মিয়া মুড়ইছড়া নতুন বস্তি এলাকার মনু মিয়ার ছেলে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুমেনার বাবা মাসুক মিয়া, ভাই তসিদ আলী, নওশাদ আলী ও বোন আফিয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল শনিবার রাত ৩টার দিকে মেয়ে রুমেনাকে অপহরণের সময় মা ছায়রা বেগমকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত এমনটি অভিযোগ করেন রুমেনার পিতা মাসুক মিয়া ও ভাই তসিদ আলী। কিন্তু উদ্ধারকৃত রুমেনা কুলাউড়া থানায় তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, তাকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় সে ওই এলাকার তিন সন্তানের জনক মুসিকের সাথে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। তার মা প্যারালাইজড রোগী ছিলেন। সে আরও জানায় তার বাবা ও মায়ের বছর দেড়েক আগে তালাক হওয়ার পর তার বাবা পেয়ারা বেগম নামে অন্য একজনকে বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীকে নিয়ে পাশের বাড়িতে থাকেন এবং তার মা ছায়রা দুই ছেলে তসিদ আলী, নওশাদ আলী ও ছোট মেয়ে আফিয়াকে নিয়ে থাকতেন। পারিবারিক কলহ থাকায় রুমেনা পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গণকিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে নানি আমেনা বেগমের সাথে থাকত। গত ১৩ এপ্রিল বুধবার তার ভাই তসিদ আলী তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরের তার মার সাথে বাবা মাসুক মিয়া ও সৎ-মা পেয়ারার কথা কাটাকাটি হয়। রুমেনা পারিবারিক কলহে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে তুলে নিয় যাওয়ার জন্য মুসিক’কে বলে। ওই রাতে মুসিক দরজা খুলে ঘরে আসলে রুমেনা সেচ্ছায় তার সাথে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় তার মা সুস্থ ছিলেন এবং তাকে কেউ মারধর করেনি বলে সে জানায়।
মুসিক মিয়া জানায়, রুমেনার পরিবারের সাথে অনেক দিন থেকে তার সম্পর্ক ছিল। রুমেনা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে শনিবার রাতে ৩টার দিকে তাদের ঘরে গিয়ে রুমেনাকে টিলাগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রমের তার ফুফা আইন উদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই দিন ফুফার বাড়িতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। শনিবার দুপুরে রুমেনার মা ছায়রার মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায় তারা। তার ও রুমেনার মধ্যে সম্পর্কের কথা রুমেনার ভাই তসিদ আলী ও মাসুক মিয়া জানতে পারে। এই নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে ঝগড়াবিবাদের সৃষ্টি হয়। তার প্রথম স্ত্রী নেহার বেগমের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
তসিদ আলী জানায়, শনিবার রাতে মুসিক মিয়া কয়েকজন লোক নিয়ে তাদের ঘরে ঢুকে ছায়রা বেগমকে মারধর করে বোনকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় মা ও বোনের চিৎকার শুনে তার ছোট ভাই নওশাদ এসে দেখতে পায় ছায়রা বেগমের মুখে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। পরে সে এসে মায়ের মুখে বিষের গন্ধ পায়। পরে বিষয়টি তার বাবা মাসুক মিয়াকে জানালে শনিবার সকালের দিকে ছায়রা বেগমকে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
ছায়রা বেগমের মা আমেনা বেগম জানান, সকাল ৭টার দিকে মাসুক মিয়া মোবাইলে জানায় তার মেয়ে বিষ খেয়ে মারা গেছে। মেয়েকে দেখার জন্য তার বাড়িতে গেলে নাতি তসিদ ও মেয়ের জামাই মাসুক মেয়ের লাশ দেখতে দেননি। তিনি আরও বলেন, পারিবারিক কলহ থাকায় তার নাতনী রুমেনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। গত বুধবার তসিদ মিয়া রুমেনাকে কনে দেখানোর জন্য তাদের বাড়ি মুড়ইছড়ায় নিয়ে যায়। তার দাবি মেয়ের জামাই মাসুক মিয়া ও নাতি তসিদ মিয়া তার মেয়ে ছায়রাকে হত্যা করেছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ. শামছুদ্দোহা পিপিএম বলেন, ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) জুনায়েদ আলম সরকার উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।