‘আব্বা, তুমি ভিক্ষা করে টাকা পাঠাও’
ডেস্ক রিপোর্ট :: “আব্বা, তুমি ভিক্ষা করে টাকা পাঠাও। নইলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আমার কিডনি বিক্রি করে ফেলবে।”
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব-৩-এর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে এভাবেই ছেলের দুঃসহ প্রবাসজীবনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সিলেটের দরিদ্র কৃষক কনু মিয়া। চাকরির নামে বিদেশ পাঠিয়ে কানুর ছেলেকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করছিল পাচারকারীরা।
কানু জানান, ছেলেকে মুক্ত করতে নিজের শেষ সম্বল দুই কানি জমি দেড় লাখ টাকা, বিয়াইয়ের দেওয়া গরু সাড়ে ১৭ হাজার টাকা বিক্রি করেও পাচারকারীদের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না। পরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি র্যাবের শরণাপন্ন হন। তিনি বলেন, “আমার সব শেষ, আর কিছু নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার।
এর আগে সুদান ও লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আবদুল কাইয়ুম, খোকন আহমেদ আজগর ওরফে আলী, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. নাসির উদ্দিন, ফারুকুল ইসলাম রাসেল, মো. রুবেল হাওলাদার ও মো. বাদল হাওলাদার।
খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন, “ছেলে সমর আলীকে বিদেশে পাঠানোর জন্য কানু মিয়াকে কাইয়ুমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন পাশের গ্রামের দিদার খাঁ। সাড়ে চার লাখ টাকায় ছেলেকে লিবিয়ার ভিসা দেয়া হবে বলে রফা হয়। সে অনুযায়ী বিমানবন্দরের ওপেন হোটেলে কাইয়ুমকে দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন কনু মিয়া। বাকি দুই লাখ টাকা বিদেশে যাওয়ার পর দেয়া হবে বলে মৌখিকভাবে চুক্তি হয়। জাল পাসপোর্ট দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ভিজিট ভিসায় সমর আলীকে সুদানে পাঠায় ওই চক্রটি। এর দুই দিন পরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে সমর আলী তার বাবাকে ফোন করে বলেন, “আব্বা আমি সুদানে আসছি। কিন্তু কাইয়ুমের লোকজন আমাকে মারধর করছে।” এরপর কনু মিয়া ঢাকায় এসে কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে চার কিস্তিতে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তার পরও কাইয়ুম তার কাছে আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আবদুল কাইয়ুম, ফারুকুল ইসলাম রাসেল ও জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগিতায় খোকন সুদানে অবস্থানকারী শাহিন, দেলোয়ার, অলিল, সোহাগ, জহির ও লিটন- এই চক্রের সহযোগিতায় সুদানে দুই-তিন মাসের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করে দেয়। যে নামে ভিসা বের করত, কাইয়ুম সেই নামেই জাল পাসপোর্ট তৈরি করত। রুবেল ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে জাল পাসপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করত। অন্যদিকে কাইয়ুমের অপর সহযোগী টিকেট করে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার করার বিষয়ে সহযোগিতা করত। খোকন প্রথমে সুদানে যাত্রীদের আটক রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। পরে পাসপোর্ট নিজেদের কাছে নিয়ে লিবিয়ার একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে ট্রাকে করে লিবিয়ায় পাচার করত।
খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন, কানু মিয়ার ছেলে সমর আলী এখন লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাসে আছেন। সমর আলী শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।